Sunday, May 22, 2011

এই সময়ে আশু কাজ হলো পার্টি ও বামফ্রন্টকে রক্ষা করা

http://ganashakti.com/bengali/news_details.php?newsid=6452

এই সময়ে আশু কাজ হলো
পার্টি ও বামফ্রন্টকে রক্ষা করা

প্রকাশ কারাত

এবারের বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্টের বড় ধরনের পরাজয় হয়েছে। এই ফলাফল দেশের বামপন্থী, গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল শক্তিগুলির কাছে যথেষ্ট নৈরাশ্যজনক। কারণ এরা পশ্চিমবঙ্গকে বামপন্থীদের দুর্গ বলে মনে করে। বামফ্রন্ট সরকারের ৩৪ বছরের শাসন এবং ১৯৭৭ থেকে পরপর সাতবার নির্বাচনে জেতার মতো চমৎকার সাফল্য অর্জনের পর সি পি আই (এম)-র নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট সরকার ক্ষমতাচ্যুত হলো। জনগণের এই রায়ের কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। যেমন জনগণ চূড়ান্তভাবে পরিবর্তন চেয়েছিলেন এবং বিপুলভাবে তৃণমূল-জোটকে জিতিয়েছেন। তাছাড়া বামফ্রন্ট-বিরোধী শক্তিগুলি (দক্ষিণপন্থী থেকে শুরু করে মাওবাদীদের মতো উগ্রপন্থীরা পর্যন্ত) পুরোপুরি সংহত হয়েছিল। তাছাড়া এটাও স্পষ্ট যে, গত দু'বছরে বামফ্রন্ট যতটা জমি হারিয়েছে আমরা আশা করলেও সেই পরিমাণে হারানো জমি পুনরুদ্ধার করতে পারেনি।

সমালোচনামূলক পর্যালোচনা

কোন্‌ কোন্‌ কারণে বামফ্রন্টের প্রতি সমর্থন হ্রাস পেল এবং কেন এই রাজনৈতিক পরিবর্তন হলো তা চিহ্নিত করার জন্য পার্টি নির্বাচনী ফলাফল অনুপুঙ্খভাবে পর্যালোচনা করবে। যদিও বামফ্রন্ট ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের তুলনায় ১১ লক্ষ ভোট বেশি পেয়েছে, তবুও লোকসভা নির্বাচনের তুলনায় বামফ্রন্টের প্রাপ্ত ভোট ২.২ শতাংশ কমে গেছে। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে বামফ্রন্টের শাসনে উল্লেখযোগ্য অনেক সাফল্য অর্জিত হলেও টানা এতদিন বামফ্রন্ট সরকার থাকার ফলে কিছু নেতিবাচক উপাদানও পুঞ্জীভূত হয়েছিল। পার্টির রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক পটভূমিকায় নির্বাচনী ধারার সমালোচনামূলক মূল্যায়ন করলে তা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিগত ত্রুটি সংশোধন এবং সাংগঠনিক ঘাটতি দূর করার ক্ষেত্রে ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে কাজে লাগবে।

কেরালায় এল ডি এফ অল্পের জন্য ক্ষমতা পেল না। আর তিনটি আসন পেলে এল ‍‌ডি এফ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতো। ইউ ডি এফ কোনোক্রমে দু'টি আসনের জন্য সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে। ইউ ডি এফ এবং এল ডি এফ-র মধ্যে ভোটের শতাংশের ক্ষেত্রে পার্থক্য মাত্র ০.৮৯ শতাংশের। বোঝাই যাচ্ছে, কেরালার জনগণ মোটামুটিভাবে এল ডি এফ সরকারের কাজকর্মের ব্যাপারে সন্তুষ্ট ছিলেন। সেখানে কোনো সরকার-বিরোধী হাওয়া ছিল না। তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী ভি এস অচ্যুতানন্দনের দুর্নীতি-বিরোধী অভিযান সাধারণ মানুষের সমর্থন পেয়েছিল। প্রাথমিক রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে এল ডি এফ-র জয়ের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল কিছু অংশের মানুষের মধ্যে কয়েকটি জাতপাত-ভিত্তিক ও ধর্মীয় সংগঠনের প্রভাব। কেন্দ্রে ইউ পি এ সরকারের আমলে দুর্নীতির রেকর্ড এবং মূল্যবৃদ্ধি রোধে ব্যর্থতার দরুন অসংখ্য মনুষ কংগ্রেসকে ভোট দেননি।

উদ্দেশ্যমূলক আক্রমণ

পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্টের পরাজয়ের ফলে কর্পোরেট মিডিয়া কুৎসার বান ডাকাতে শুরু করেছে সি পি আই (এম) এবং অন্যান্য বামপন্থী দলগুলির বিরুদ্ধে। নির্বাচনী ফলাফলের এমন ব্যাখ্যা করা হচ্ছে যেন একটি বিপর্যয় ঘটে গেছে এবং যা থেকে সি পি আই (এম) কোনোদিন বেরিয়ে আসতে পারবে না। কিছু ভাষ্যকারের আক্রমণের লাইন হলো কমিউনিস্ট পার্টির মতাদর্শকে নস্যাৎ করার চেষ্টা। তাঁরা বলছেন, ঐ মতাদর্শ বর্তমান সময়ের সঙ্গে খাপ খায় না এবং এই জনাদেশের মধ্যে দিয়ে বিশ্বে সমাজতন্ত্র ও মার্কসবাদের সমাপ্তি সূচিত হচ্ছে।

এসব আসলে সর্বৈব মিথ্যা ও ভুয়া কথাবার্তা। কারণ সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের কোনো বাস্তব প্রভাব সি পি আই (এম)-র উপরে পড়েনি। প্রকৃতপক্ষে গত শতাব্দীর নয়ের দশকে পার্টির পশ্চিমবঙ্গ এবং কেরালায় আরো বিকশিত ও শক্তিশালী হয়েছে। সি পি আই (এম) মার্কসবাদের তত্ত্ব ও প্রয়োগ থেকে শিক্ষা নেয়। পার্টি সৃজনশীলভাবে ভারতীয় পরিস্থিতি অনুযায়ী মার্কসবাদকে প্রয়োগ করে। এটা কোনো স্থানু বিষয় নয়, বিষয়টি সব সময়ই বিকশিত হচ্ছে।

বিগত চার দশকেরও বেশি সময় ধরে বহু সংগ্রাম ও গণ-আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে সি পি আই (এম) এবং বামফ্রন্ট গড়ে উঠেছে এবং শক্তিশালী হয়েছে। এই সব লড়াই সংগ্রাম এবং গণ-আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে যে গণভিত্তি তৈরি হয়েছিল তার উপর দাঁড়িয়েই বামফ্রন্টের নির্বাচিত সাফল্য অর্জিত হয়েছে। বামফ্রন্ট নিছক কোনো নির্বাচনী আঁতাত নয়। সি পি আই (এম) শুধুমাত্র নির্বাচনী কাজকর্মের মধ্যে দিয়ে একটি শক্তিশালী গণপার্টিতে পরিণত হয়নি।

যাঁরা পশ্চিমবঙ্গে সি পি আই (এম) এবং বামফ্রন্টের জন্য বিদায়গাথা রচনা করতে ব্যস্ত তাঁরা কিন্তু ভুলে যাচ্ছেন, এই পরাজয়ের মধ্যেও বামফ্রন্ট ৪১ শতাংশ ভোট পেয়েছে। ১ কোটি ৯৫ লক্ষের বেশি ভোটার এবারে বামফ্রন্টকে ভোট দিয়ে সমর্থন করেছেন। এই উল্লেখযোগ্য গণভিত্তি গত দু'বছরে সি পি আই (এম) এবং বামপন্থীদের উপরে শত আক্রমণ সত্ত্বেও তাদের প্রতি সমর্থনে অবিচল ছিল এবং এটি হলো মেহনতী মানুষের শ্রেণীভিত্তি। কমিউনিস্ট-বিরোধী ও নয়া উদারনৈতিকপন্থী বিষধর ভাষ্যকারেরা যে ভুল বলছেন তা একদিন প্রমাণিত হবে। জনগণের যে সব অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে তাদের আবার ফিরিয়ে আনার জন্য তাদের দাবি-দাওয়ার সমর্থনে সি পি আই (এম) এবং বামপন্থী শক্তিগুলি ধৈর্যসহকারে লড়াই সংগ্রাম চালাবে।

আক্রমণের আরেকটি ধরন হলো বামফ্রন্টের সাফল্যের পুরো রেকর্ড সম্পর্কে অপপ্রচার চালানো এবং সি পি আই (এম)-কে দানব হিসাবে হাজির করা। সি পি আই (এম)-কে একটি স্বৈরতান্ত্রিক শক্তি হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে, যারা মানুষকে অবদমিত করে রেখেছিল। কয়েকজন ভাষ্যকর আবার সবরকম মাত্রা ছাড়িয়ে বলেছেন, বামফ্রন্টের আগের জয়গুলির পিছনে রয়েছে সি পি আই (এম)-র যে-কোনো বিরোধীর উপরে দমনপীড়ন। এই সমালোচকেরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে ভুলে গেছেন যে, ১৯৭৭ থেকে প্রতিটি বিধানসভা নির্বাচনে বাম-বিরোধী শক্তিগুলি কোনো সময়েই ৪০ শতাংশের নিচে ভোট পায়নি। সি পি আই (এম) এবং বামফ্রন্ট এর আগে সব নির্বাচনে ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশের মধ্যে ভোট পেয়ে চমৎকার নজির তৈরি করেছে। এর কারণ হলো পার্টির শিকড় জনগণের অনেক গভীরে প্রোথিত ছিল এবং জনগণের ম‍‌ধ্যে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে পার্টির দৃ‌‌ঢ় সমর্থন ছিল। পার্টিকর্মীদের উদ্ধত ও দুর্নীতিবাজ বলে প্রতিপন্ন করার চেষ্টা চলছে একটা উদ্দেশ্য নিয়ে। তা হলো পার্টিকে শক্তিহীন করে তোলা। কারণ এই উৎসর্গীকৃত ও নিঃস্বার্থ কর্মীরাই হলেন সংগঠনের মেরুদণ্ড।

পাশাপাশি বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ হলো, পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকার ছিল মজ্জাগতভাবে অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরতান্ত্রিক। যে ব্যবস্থায় যে কোনো ধরনের বিরোধিতাকে আমল দেওয়া হতো না এবং ঐ সরকার নিজেদের মতামত জোর করে পশ্চিমবঙ্গের সমাজজীবনের উপরে চাপিয়ে দিত। এই অভিযোগ যাঁরা করছেন তাঁরা স্বচ্ছন্দে ভুলে যাচ্ছেন বামফ্রন্ট সরকার এই রাজ্যে টানা ৩৪ বছর ক্ষমতায় ছিলো সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচনে মানুষের রায় নিয়ে। সি পি আই (এম) এবং বামপন্থী দলগুলি প্রমাণ করেছে যে গণতন্ত্রে তারাই সবচেয়ে নিরবচ্ছিন্ন শক্তি। ১৯৫৭ সালে কেরালা বিধানসভা নির্বাচনে কমিউনিস্টরা জয়লাভ করে এবং দেশের মধ্যে প্রথম কমিউনিস্ট মন্ত্রিসভা গঠন করে। কমিউনিস্টরা বিপুল সংখ্যক মানুষকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় যুক্ত করে গণতন্ত্রকে উজ্জীবিত করেছে। পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা ও ত্রিপুরায় উঁচুহারে ভোট দান কোনো আকস্মিক ঘটনা নয়। এই তিনটি রাজ্যে ভূমিসংস্কার পুরানো জমিদারি ব্যবস্থা ভেঙে দিয়েছে এবং তার ফলে গণতন্ত্র প্রসারিত হয়েছে। পুনরুজ্জীবিত হয়েছে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা। এখন আধিপত্যশীল শ্রেণীগুলি এবং কায়েমী স্বার্থগুলির এজেন্টরা বামপন্থীদের গণতান্ত্রিক ধারার নজিরকে বিকৃত ও কলঙ্কিত করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।

বামপন্থীদের নেতৃত্বাধীন সরকারগুলির ভূমিকা

জনগণের সমর্থন পাওয়া গেলে রাজ্য সরকারগুলি পরিচালনার জন্য সি পি আই (এম) তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলেছে। বামপন্থীদের নেতৃত্বাধীন সরকারগুলিকে এমনভাবে পরিচালিত করতে হবে যাতে বামপন্থী ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনগুলি এবং মেহনতী জনগণের আন্দোলন শক্তিশালী হয়। পার্টি কর্মসূচীতে উল্লেখ করা হয়েছে, এই ধরনের সরকারগুলির উচিত জনগণকে রিলিফ দেওয়ার মতো কার্যক্রম গ্রহণ করা এবং বর্তমান সীমাবদ্ধতার মধ্যে বিকল্প নীতিসমূহের জন্য চেষ্টা করা, সেগুলিকে মানুষের মধ্যে নিয়ে যাওয়া এবং সেগুলির রূপায়ণ করার জন্য প্রয়াস প্রহণ করা। এ ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট সরকারের প্রশংসনীয় রেকর্ড আছে। এই লক্ষে ঐ সরকার গুরুত্বসহকারে কাজ করেছে। এই ধরনের বামপন্থী নেতৃত্বাধীন সরকারের অভাব নিঃসন্দেহে একটি ধাক্কা। কিন্তু এই ক্ষতি স্থায়ী ও মৌলিক ধরনের নয়। সি পি আই (এম) বরাবরই মেহনতী জনগণের নিজস্ব শ্রেণী এবং গণসংগঠনগুলির মধ্যে দিয়ে তাদের সংগঠিত করা ও গণ-আন্দোলন গড়ে তোলা এবং এইভাবে জনগণের রাজনৈতিক চেতনার বৃদ্ধি ও বিকাশের উপরে গুরুত্ব দিয়ে এসেছে। এই প্রক্রিয়ার ফসল হচ্ছে বামপন্থীদের নেতৃত্বাধীন সরকারগুলি।

নির্বাচনী ফলাফলের অনুপুঙ্খ ও সমালোচনামূলক পর্যালোচনার পর সি পি আই (এম) মৌলিক শ্রেণীগুলির ইস্যুসমূহ এবং মেহনতী মানুষের স্বার্থে লড়াইয়ের বিষয়গুলি নিয়ে মনোনিবেশ করবে। বামপন্থীদের রাজনৈতিক মঞ্চের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলির মধ্যে আছে নয়া-উদারনৈতিক অর্থনৈতিক নীতিসমূহের বিরুদ্ধে লড়াই, জনগণের জীবন-জীবিকাকে রক্ষা করা, জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে রক্ষা করা। অর্থাৎ কংগ্রেস এবং বি জে পি-র মতো শাসক শ্রেণীগুলির রাজনৈতিক দলগুলির বিরুদ্ধে দেশের একমাত্র বিকল্প রাজনৈতিক মঞ্চ হলো বামপন্থী‍‌দের রাজনৈতিক মঞ্চ।

পশ্চিমবঙ্গে পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সি পি আই (এম) গত তিন দশকে বামফ্রন্ট সরকারের আমলে জনগণের অর্জিত সুফলগুলিকে রক্ষা করবে। শাসক জোটের শ্রেণীচরিত্র অনুযায়ী ভূমি সংস্কারের সাফল্যগুলিকে নস্যাৎ করার চেষ্টা হবে, বানচাল করার চেষ্টা হবে মেহনতী জনগণের অর্জিত সাফল্যগুলিকে। অপরদিকে আমরা ভূমি সংস্কার এবং বর্গাদার ও খেতমজুরদের অধিকারগুলি রক্ষা করবো। শ্রমিকরা এবং সব অংশের মেহনতী মানুষ যাতে তাঁদের অধিকার ও জীবন-জীবিকা রক্ষার লড়াইয়ে শামিল হন তার জন্য তাঁদের আরো ভালোভাবে সংগঠিত করা হবে। ধর্মনিরপেক্ষতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্যকে রক্ষা করতে হবে। জনগণের ঐক্য ও রাজ্যের সংহতি বিনষ্টকারী বিভেদকামী শক্তিগুলির মোকাবিলা করতে হবে। এই কাজ করার জন্য বামপন্থীদের ঐক্যকে শক্তিশালী করা জরুরী।

পার্টি ও বামফ্রন্টকে রক্ষা করো

নির্বাচনের পরবর্তী পর্যায়ে আশু কাজ হলো পার্টি, বামফ্রন্ট এবং ইতোমধ্যে আক্রান্ত পশ্চিমবঙ্গের আন্দোলনকে রক্ষা করা। নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই পার্টি ও ট্রেড ইউনিয়নগুলির কার্যালয়ের উপরে দফায় দফায় আক্রমণ শুরু হয়ে যায়। সি পি আই (এম) এবং বামফ্রন্টের কর্মী ও সমর্থকরা জখম হচ্ছেন খুন হচ্ছেন। ভোটের ফল বের হবার পর পশ্চিমবঙ্গে সি পি আই (এম)-র ৭ জন নেতাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। নির্বাচনী জয়ের সুযোগ নি‍য়ে তৃণমূল কংগ্রেস বহু এলাকায় সি পি আই (এম) এবং বামপন্থী দলগুলিকে নিশ্চিহ্ন করতে চাইছে। এইসব আক্রমণের মোকাবিলা করতে হবে। এই ধরনের হিংসাত্মক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গের জনগণের গণতান্ত্রিক ভাবাবেগ জাগ্রত করতে হবে। এই ধরনের আক্রমণ প্রতিহত করার প্রত্যয় নিয়ে দেশে সমগ্র পার্টি, বামপন্থী ও গণতান্ত্রিক শক্তিগুলি দৃঢ়ভাবে পশ্চিমবঙ্গে সি পি আই (এম) এবং বামফ্রন্টের সঙ্গে আছে।


রাশিয়ার ফের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা
উসকে দিলো রুশ-মার্কিন উত্তেজনা

সংবাদ সংস্থা

মস্কো, ২১শে মে— ফের পারমাণবিক অস্ত্রবাহী আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সফল পরীক্ষা চালিয়েছে রাশিয়া। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে ইউরোপে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করা নিয়ে তৈরি করা রুশ-মার্কিন উত্তেজনা শুরুর পর, শুক্রবার দ্বিতীয়বারের মতো এমন একটি শক্তিশালী ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালালো রাশিয়া।

রাশিয়ার সরকারী সূত্রে বলা হয়, সিনেভা নামের ক্ষেপণাস্ত্রটি ব্যারেন্ট সাগরে একটি রুশ সাবমেরিন থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়। ক্ষেপণাস্ত্রটি রাশিয়ার ঠিক বিপরীতে অবস্থিত কামচাতকা উপদ্বীপের লক্ষ্যবস্তুতে সফলভাবে আঘাত হানে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আইগর কোনাশেনকোভ রাশিয়ার সংবাদসংস্থাকে জানান, ক্ষেপণাস্ত্রটি জলের নিচ থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়। এর ওয়্যারহেড ঠিক লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে।

সাবমেরিন থেকে নিক্ষেপণযোগ্য সিনেভা ক্ষোপণাস্ত্রটি রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্রাগারে একেবারে সাম্প্রতিক সংযোজন। এরকম ক্ষোপণাস্ত্র প্রথম পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপ করা হয় ২০০৮সালে। এ প্রযুক্তির প্রতিটি ক্ষেপণাস্ত্র ১০টি করে অস্ত্র বহন করতে পারে এবং এর পাল্লা ১১হাজার কিলোমিটারেরও বেশি।

জলের নিচ থেকে এর আগে ২৬শে এপ্রিল একটি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়েছিল রাশিয়া। পুরাতন মডেলের ক্ষেপণাস্ত্রগুলির প্রযুক্তি হালনাগাদ করতে রাশিয়া মাঝে মাঝেই এমন পরীক্ষা চালায়। তবে এই পরীক্ষা পশ্চিমী দুনিয়ার সঙ্গে তৈরি হওয়া উত্তেজনায় আরো একটু জ্বালানি যোগ করবে বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা।

রাশিয়া-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন নিরস্ত্রীকরণ চুক্তিতে সম্মত হয়েছে যা এই বছরই কার্যকরী হওয়ার কথা। তবে রাশিয়ার এ ধারাবাহিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা সেই চুক্তি বাস্তবায়ন কার্যত অনিশ্চিত করে দিল। অবশ্য সম্প্রতি ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা জোরদার করতে ইউরোপের দেশগুলোকে চাপ দিয়ে যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়ার ধারণা, পশ্চিমী শক্তির এই উদ্যোগ তাদের ভূখণ্ডে হামলার একটি পূর্ব প্রস্তুতি। এই কারণে মস্কো ওয়াশিংটনের ওপর বেশ ক্ষিপ্ত।

রায়নার পর আউশগ্রামের বিধায়কের
বাড়িতে হামলা তৃণমূলীদের

নিজস্ব সংবাদদাতা

বর্ধমান, ২১শে মে — স্ত্রী পুতুলরানী মেটেকে জখম অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে গিয়ে হাতে ছুরির আঘাত নিয়ে জখম হয়েছেন আরও এক আত্মীয়। পঞ্চম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর পড়ুয়া দুই শিশুকন্যা এখন আছে পড়শীদের আশ্রয়ে। রাত পর্যন্ত গ্রাম ঘিরে রাখা তৃণমূলী দুষ্কৃতীদের হাতে ঘরবন্দী একমাত্র মানুষটি জানালেন, রাতের মধ্যেই খতম করে দেওয়ার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেসের লোকজন। থানার ওসি, পুলিস সুপার সবাইকে টেলিফোন করে আমার এই অবস্থার কথা জানি‍য়েছি।

তিনি পেশায় খেতমজুর। তাঁর আরও একটি পরিচয় তিনি এবার বিধানসভা নির্বাচনে বর্ধমানের আউশগ্রাম কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত সি পি আই (এ‌ম)-র বিধায়ক। 'পরিবর্তন'-র জয়োল্লাসে এদিন সেই বিধায়কও রেহাই পেলেন না। রায়নার পর শনিবার আউশগ্রামের বিজয়ী প্রার্থী বাসুদেব মেটের বাড়িতে ঢুকে প্রাণঘাতী হামলা চালালো তৃণমূলীরা। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যে সন্ধ্যায় কলকাতা শহর পরিক্রমায় তখনও আউশগ্রামের বাবুইসোল গ্রামের বাড়ির চারপাশ ঘিরে রেখে তৃণমূলীদের হুমকি অব্যাহত।

'গ্রামেই তৃণমূলীরা বিজয়‍ মিছিল বের করেছিলো। সেখান থেকেই এদিন সকাল পৌনে বারোটা নাগাদ সবুজ আবির ছুঁড়ে আর বোমা মেরে হামলা চালায় আমার বাড়িতে। মাটির বাড়িতে কোনো বাধা ছাড়াই জনা ৭০ তৃণমূলবাহিনী ঢুকে আক্রমণ শুরু করে।' বলছিলেন বাসুদেব মেটে। বিজয়ী সি পি আই (এম) প্রার্থীকে ঘর থেকে টানাহেঁচড়া করে বের করে নিয়ে যাওয়ার সময় বাধা দিতে থাকা ৭০ বছরের বৃদ্ধাকেও বাদ দেয়নি দুষ্কৃতীরা। তাঁকে মাটিতে ফেলে আছাড় মারে হামলাকারীরা। আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রাম থেকে এদিন জড়ো হয়ে এই হামলা চালানো হয়েছে। বাবুইসোল গ্রামের তৃণমূলীরা বাসুদের মেটের ঘর দেখিয়ে দেয়। আর সেই ঘর লক্ষ্য করে পরিকল্পিত হামলা চালায় বহিরাগত তৃণমূলী দুষ্কৃতীরা। আক্রমণের সময় বাধা দি‍‌তে গিয়ে তৃণমূলীরা লাঠি দিয়ে বেপরোয়া আঘাত করে বাসুদেব মেটের স্ত্রী পুতুলরানী মেটের ওপর। তিনি এখন বননবগ্রাম হাসপাতা‍‌‍‌লে ভর্তি। বিধায়ককে নিশানা করে তৃণমূলীদের চালানো চপারের আঘাতে গুরুতর জখম রবীন্দ্রনাথ মেটে। হামলার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়া পুলিসকেও রেয়াত করেনি তৃণমূলীরা। পুলিসের ওপরও চড়াও হয় দুষ্কৃতীরা।

অন্যদিকে আউশগ্রাম থানারই আলিনগর নওয়াদায় গ্রামে বাউড়ি বাগদীপাড়া, গরিব পাড়াতে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা সশস্ত্র অবস্থায় শুক্রবার রাতে আক্রমণ করে। গরিবদের বাড়ি ভাঙচুর, মারধর করে, মহিলাদের রেহাই দেয়নি তৃণমূলের মস্তানবাহিনী। আক্রান্ত হয় পার্টি জোনাল কমিটির সদস্য আলমগীর মণ্ডল, সি ‍‌পি আই (এম) কর্মী পুলক মণ্ডল, দিলীপ বজর, সুশান্ত নন্দীর বাড়ি। ভাঙচুর, লুট করে ফিরে যাবার পর বাগদী, বাউড়ি, দাসপাড়ায় গরিবরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন নিজেদের রক্ষা করার জন্য। শনিবার সকালে তৃণমূলের ২৫-৩০ জনের একটি সশস্ত্র দল ফের গরিব পাড়াগুলি আক্রমণ করলে প্রায় দেড় হাজার গরিব মানুষ ঘর ছেড়ে রাস্তায় নেমে আসেন প্রতিরোধে। এই প্রতিরোধ আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন মহিলারা। এতো মহিলা একসাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের তাড়া করলে মস্তানবাহিনী পালিয়ে যায়। আদিবাসী বাউড়ি, বাগদী বাড়িতে মহিলাদের প্রতিরোধে গরিবপাড়াগুলি সন্ত্রাস মোকাবিলায় অগ্রণী ভূমিকা নেবার পর ঘটনাস্থলে র‌্যাফ আসে, পুলিস একজন তৃণমূলের মস্তান ও চারজন আক্রান্ত গরিব মানুষকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে যায়।

অভিযোগ, তৃণমূলের মস্তানবাহিনী গরিব মানুষকে আক্রমণ করে পিছু হটার পর পুলিস বাড়ি বাড়ি ঢুকে গরিব বাড়ির মেয়েদের ভয় দেখানো। এই ঘটনায় ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। এই প্রতিরোধের বার্তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে গ্রামে গ্রামে।

শনিবার সকালে গুসকরাতে আক্রমণ করেছে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা সি পি আই (এম) কর্মীদের বাড়ি, জলপথ পরিবহন অফিসে ভাঙচুর করে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। ৮ নম্বর ওয়ার্ডে পার্থসারথী মাঝির দোকানে হামলা করে, তাঁকেও মারধর করে দুষ্কৃতীরা। ৮০ বছরের বৃদ্ধকেও মারধর করেছে তৃণমূলের মস্তানবাহিনী। এখানে শিবু মণ্ডলের বাড়ি ভাঙচুর হয়েছে।

এর আগে রায়নার নবনির্বাচিত প্রার্থী বাসুদেব খাঁর বাড়ি আক্রমণ করে তৃণমূলের খুনেবাহিনী। পরিবর্তনের এই জমানায় সি পি আই (এম) কর্মী, নেতারা শুধু নয় জনপ্রতিনিধিও আক্রান্ত হচ্ছেন। ভাতার মেমারি, জামালপুর, বর্ধমান শহর, বর্ধমান উত্তর বিধানসভার বিস্তীর্ণ গ্রাম, রায়না, খণ্ডঘোষেও তৃণমূলের মস্তানবাহিনীর আক্রমণে ঘরছাড়া, বহু বাড়ি লুঠ, ভাঙচুর, পার্টি অফিসে আক্রমণ চলছেই। রাজ্যে পালা বদলের নামে গরিব মানুষের বিরুদ্ধে বদলা নিচ্ছে তৃণমূলের আশ্রিত জোতদার, দুষ্কৃতীরা। শান্তি, সম্পদ লুট হচ্ছে প্রতিদিন।

সুর বদলে মমতা: মাইনে হবে সকলের

নিজস্ব প্রতিনিধি

কলকাতা, ২১শে মে— সরকারী কর্মচারীদের মাইনে নিয়ে রাজ্য সরকারের কোনো সমস্যা নেই। মহাকরণের ক্ষমতা, চেয়ার দখলের ২৪ঘণ্টার মধ্যেই এই কথা সরাসরি বুঝিয়ে দিয়েছেন সেই তিনি, যিনি গত কয়েকমাস এই নিয়ে সর্বাধিক আশঙ্কা প্রকাশ্যে প্রকাশ করে এসেছেন। তিনি আর কেউ নন— স্বয়ং মমতা ব্যানার্জি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি শনিবার বিকালে মহাকরণে ভিড়ে ঠাসা সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়ে দিয়েছেন, 'সরকারী কর্মচারীরা মাইনে পাবেন।'

শুভেচ্ছা জানিয়ে এদিন বিকালে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের মনজিনিসের প্যাকেটে খাবারও খাওয়ানো হয়েছে। খটকা লাগে এখানেই। তিনি তখনও মুখ্যমন্ত্রী হননি। তখনও তিনি রেলমন্ত্রী। বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারসভাগুলিতে গত কয়েকমাস নিয়ম করে মমতা ব্যানার্জি বলেছিলেন যে, রাজ্যের কোষাগারের অবস্থা সঙিন। এতটাই কঠিন অবস্থা যে, পরের মাস থেকে সরকারী কর্মচারীরা মাইনে পাবেন না। সেই প্রচারে যে একটি বড় অংশের মানুষ চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন, বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে মতামত দিয়েছেন— এই নিয়ে সন্দেহের বিশেষ অবকাশ নেই। যদিও শুক্রবার রীতিমতো তথ্য সহকারে রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত জানিয়েছিলেন, গত ৩৪বছরে বামফ্রন্ট সরকারের আমলে কখনই কর্মচারীদের মাইনে বন্ধ হয়নি, এমন পরিস্থিতিও তৈরি হয়নি। এবারও তেমন পরিস্থিতি, আশঙ্কার কোনো কারণ নেই যে কর্মচারী, শিক্ষকদের মাইনে দেওয়া যাবে না।

নির্বাচনের পর, এমনকি ফলপ্রকাশের পরও এই আশঙ্কার কথা লাগাতার জানানো হয়েছে তৃণমূলের পক্ষ থেকে। শুক্রবারই মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে যাত্রা শুরু করেছেন মমতা ব্যানার্জি। শনিবার তিনি মহাকরণের ক্যান্টিন পরিদর্শন করে সাংবাদিক সম্মেলন করেন। সেখানেই তাঁকে সরকারী কর্মচারীদের মাইনে নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। মুখ্যমন্ত্রী জানান, ''মাইনে পাবেন সরকারী কর্মচারীরা। কে কোন্‌ দলের তা আমরা দেখি না। আমাদের দায়িত্ব সরকারী কর্মচারীদের দেখা।'

বলাবাহুল্য, বামফ্রন্টের আমলেও সরকারী কর্মচারী, শিক্ষকদের পরিবারের দায়িত্ব ছিল সরকারেরই। কিন্তু যা উল্লেখযোগ্য তা হলো, মুখ্যমন্ত্রীর এদিনের বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট কোষাগারে যা আছে, তাতে সরকারী কর্মচারীদের মাইনে আটকাবে না। এর মধ্যে সরকারের তহবিলে নতুন কোনো টাকার আয়োজনও মমতা ব্যানার্জির সরকার করতে পারেননি। যদিও এদিন তিনি সাংবাদিকদের সামনে তৃণমূলের মুখপত্র 'জাগো বাংলা' এবং তাঁর নিজের ছবি বিক্রির টাকা থেকে ১কোটি টাকা মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে দিয়েছেন। তবে সেই টাকায় রাজ্য সরকারী কর্মচারীদের মাইনে হয় না। কারণ মাইনে বাবদ প্রতি মাসে কয়েক হাজার কোটি টাকা খরচ হয় সরকারের। ঐ ১কোটি টাকাতে তা হবে না। প্রসঙ্গত, শুক্রবারের সাংবাদিক সম্মেলনে অসীম দাশগুপ্ত জানিয়েছিলেন যে, বেতন, অবসরকালীন ভাতা, ঋণের সুদ এবং ভরতুকি বাবদ রাজ্য সরকারের ব্যয় হয় ৩হাজার ৯৭৩কোটি টাকা।

এদিন মহাকরণে আসতে পারেননি নব নিযুক্ত অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। শুক্রবারই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। জানা গেছে, তিনি নাকি মহাকরণের জল খেয়ে অসুস্থ হয়েছেন। যদিও বাকি সব মন্ত্রীরাই এদিন এসেছিলেন। এদিন মোট ৩বার সাংবাদিক সম্মেলন করেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রথমবার জানান, তাঁর কিছু বলার নেই। তাঁকে ৭দিন সময় দিতে হবে। এই দুটি বাক্য বলে তিনি মহাকরণের ক্যান্টিন দেখতে চলে যান। ফিরে আসেন ১০মিনিটের মধ্যে। তখন প্রায় ২০মিনিট সাংবাদিক সম্মেলন করেন। তাঁকে প্রশ্ন ছিল— দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির যা অবস্থা, তাতে কী সেস কমানো হবে ? এই প্রশ্নে কিছুটা চটেই যান মমতা ব্যানার্জি। বলে ওঠেন, 'আগের সরকারকে তো এইসব বলেননি? ফিনান্সের পজিশন দেখে সিদ্ধান্ত নেবো।' এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বলেছিলেন 'ডু ইট নাউ'। সরকারী কাজের ক্ষেত্রে আপনার কী এই ধরনের কোন বক্তব্য আছে? মমতা ব্যানার্জি বলেন, 'কেউ কাজ করতে পারে। কেউ কম পারে। দেখতে হবে। কাজের ক্ষেত্রে কোনো রঙ দেখা হবে না।'

কবে রঙ দেখা হয়েছিল ? 

মুখ্যমন্ত্রী এদিন জানিয়েছেন, আগামী মঙ্গলবার দুপুরে ৩টে থেকে তিনি প্রত্যেক জেলার পুলিস সুপার এবং জেলাশাসকদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।

এদিন তাঁর তৃতীয় পর্যায়ের সাংবাদিক সম্মেলনে তিনি ঐ ১কোটি টাকার চেক পাশে দাঁড়ানো মুখ্যসচিব সমর ঘোষের হাতে তুলে দেন। ঐ সম্মেলনের পরেই ঘটে একটি বিরল ঘটনা। প্রকাশ্যেই মুখ্যসচিবকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'আপনার আজ আর কোনো কাজ নেই। আপনি বাড়ি চলে যান।'

এমনটি মহাকরণ এর আগে শোনেনি।

দুর্নীতি, মূল্যবৃদ্ধির মুকুট মাথায় নিয়েই
তিন বছরে পা দিতে চলেছে ইউ পি এ-২

নিজস্ব প্রতিনিধি

রবিবারই দুই বছর পূর্ণ করছে ইউ পি এ-২ সরকার। রবিবার বিকেলে দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে এক অনুষ্ঠানে মিলিত হবেন সরকারের বিভিন্ন দলের শরিকরা। টলোমলো সরকার খানিক স্বস্তির শ্বাস ফেলেই পা রাখছে তিন বছরে। কারণ, গত ১৩তারিখ পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের ফল সন্তোষজনক। এই পাঁচ রাজ্যের মধ্যেই রয়েছে বামপন্থীদের ঘাঁটি পশ্চিমবঙ্গ এবং কেরালা। বি জে পি-র সঙ্গে লড়াই ছিল না এর মধ্যে কোনো রাজ্যেই। উদারনীতির আবাহনে খোলাখুলি লাল কার্পেট পেতে দেওয়া কেন্দ্রীয় জোটে তৃপ্তির আবহ চোখেও পড়ছে সহজেই।

১৩তারিখ ফল বেরনোর পরই লিটার প্রতি ৫টাকা দাম বেড়েছে পেট্রোলের। গত কয়েক মাসে আটবার। কলকাতায় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অভিনন্দনের জোয়ারে ভেসে জানিয়ে দিয়েছেন, এবার পালা ডিজেলের। জানা যাচ্ছে, বাড়বে ডিজেল এবং রান্নার গ্যাসের দাম। চলতি বাজেটেই প্রায় ১৪হাজার কোটি টাকা ভরতুকি কমানো হয়েছে পেট্রোপণ্যের খাতে। মূল্যবৃদ্ধি যে আগামী ক'মাসে বাড়বে তা জানিয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।

দুর্নীতির সঙ্গে মূল্যবৃদ্ধি নিয়েও মনমোহন সিং সরকার বার বার তিরস্কৃত হয়েছে দেশের শীর্ষ আদালতে। দরিদ্র গণনার ক্ষেত্রের ওপরে ঊর্ধ্বসীমা চাপিয়ে দেওয়ার নীতির কারণে শীর্ষ আদালত সমালোচনা করেছে যোজনা কমিশনেরও। তবু, ফের সেই পদ্ধতিতেই চালু হচ্ছে দরিদ্র গণনা। 

কেরালায় বামপন্থীদের হারিয়ে সরকার গড়েছে কংগ্রেস। অবশ্য কোনোমতে- সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় আসনের চেয়ে মাত্র ১টি বেশি পেয়ে। যার সিংহভাগ কৃতিত্ব কংগ্রেস নয়, বরং ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ এবং কেরালা কংগ্রেসের। কেন্দ্রের কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোটের কাছে রাজনৈতিক সাফল্য অবশ্যই পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্টের বিপুল পরাজয়। ঠিক সেই সময়ে, যখন সংসদে পেশ হয়ে রয়েছে ব্যাঙ্ক বেসরকারীকরণ, বীমায় বিদেশী বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা বাড়িয়ে দেওয়া আর পেনশন তহবিল বেসরকারীকরণ বিল পেশ হয়ে রয়েছে। এবার পাস করাতে হবে। দেশের আর্থিক ক্ষেত্রের সরকারী নিয়ন্ত্রণ তুলে নিয়ে বিভিন্ন আয় স্তরের সাধারণ মানুষকে কোণঠাসা করার যে কর্মসূচীতে প্রধান বাধা বামপন্থীরা। পেনশন বিল পেশ করার সময়ই বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন বামপন্থী সাংসদরা। বি জে পি-র সহায়তা নিয়ে পেশ হয়েছে বিল। বি জে পি-র সমর্থন নিয়েই পাস হবে আর্থিক সংস্কারের পক্ষে থাকা একের পর এক বিল।

অর্থনৈতিক সংস্কারে বি জে পি-র সমর্থন ছাড়াও দুর্নীতি নিয়ে বি জে পি-র আড়ষ্টতা সমস্যা সামলাতে কিছুটা সাহায্য করেছে ইউ পি এ-২ সরকারকে। কর্ণাটকে খনি থেকে জমি-সর্বত্র গলা পর্যন্ত দুর্নীতির দায় বি জে পি সরকারের বিরুদ্ধেই। 

রাজনৈতিক মহলের খবর, তারপরও পাঁচ রাজ্যের এই ফলাফল যথেষ্ট ভরসা জোগাচ্ছে ইউ পি এ-২-কে। জনবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত এই পদক্ষেপ নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে কোনো অসুবিধা হয়নি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায়। কারণ, জোটের দুই এবং তিন নম্বর শরিক তৃণমূল কংগ্রেস এবং ডি এম কে-র সমর্থন।

গত দু'বছরে কেন্দ্রে জোট সরকারের লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য, একের পর এক কেলেঙ্কারির ঢল নামানো। কালো টাকার মালিকদের তালিকা জানাতে অস্বীকার করা থেকে ১লক্ষ ৭৬হাজার কোটি টাকার স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারি নিয়ে সংসদে এবং আদালতে নাজেহাল হতে হয়েছে মনমোহন সিং সরকারকে। করতে হয়েছে ঘনঘন ভাষ্য বদল। তামিলনাডুর ফলাফলে অবশ্য পরিষ্কার যে টু-জি কেলেঙ্কারির জোরালো প্রভাব পড়েছে সেই রাজ্যে। কংগ্রেস সমর্থিত ডি এম কে সরকার বিপুলভাবে হেরেছে। কংগ্রেস পেয়েছে ৪টি আসন।

ব্যাঙ্ক, বীমা বেসরকারীকরণের বিল পেশ হয়েছে। কিন্তু, পেশ হয়নি 'খাদ্য সুরক্ষা বিল'। অথচ, দু'বছর আগে এই প্রতিশ্রুতি বড় করে সামনে রেখে সারা দেশে ভোট লড়েছিল কংগ্রেস। এবারের বাজেটে উলটে কমিয়ে দেওয়া হয়েছে খাদ্যে ভরতুকিও। চালু করা হচ্ছে 'ফুড কুপন'। আসল লক্ষ্য ভরতুকি আরো কমানো। ভোটের আগে কংগ্রেস বলেছিল কৃষি উৎপাদন বেড়েছে। ভোটের পরই কেন্দ্রের বক্তব্য, উৎপাদন কমেছে বলেই মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা করছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। বীজ গবেষণা ক্ষেত্র খুলে দেওয়া হয়েছে বিদেশী কর্পোরেটদের জন্য। সংসদের বাদল অধিবেশনে আনা হতে পারে খুচরো ব্যবসায় বিদেশী বিনিয়োগ বিল। আর পাশাপাশি, এ পি এল-বি পি এল বিভাজনের খেলায় দুর্বল হচ্ছে রেশন ব্যবস্থা। 

বরাদ্দ কমেছে 'রেগা'-তেও, যে 'রেগা'র সাফল্য প্রচার করে কংগ্রেস ভোট পেয়েছে। জমি অধিগ্রহণ বিল এবং পুনর্বাসন বিলও পেশ হয়নি। উত্তর প্রদেশের ভাট্টা পারসুলে কৃষকদের ক্ষোভ এবং পুলিসের গুলিচালনায় সেই ব্যর্থতা ফের সামনে এসে পড়েছে। এন ডি এ-র আহ্বায়ক শারদ যাদবের অভিযোগ, এই সরকারের সময়ে সারা দেশে ২৭লক্ষ হেক্টর কৃষিজমি অধিগৃহীত হয়েছে।

যে পাঁচ রাজ্যে ভোট হয়েছে, সেখানে মোটের কুড়ি শতাংশ আসন রয়েছে লোকসভার। ফলে এই বিশ্লেষণ চলছে, দু'বছর ধরে নাজেহাল সরকারের শরিকদের জয় নিয়ে। একাংশের অভিমত, ঠিক এই মুহূর্তে দিল্লিতে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকারের বিকল্প স্পষ্ট নয়। ফলে, রাজ্যের ভোট হয়েছে মূলত রাজ্যের পরিস্থিতিতে। টু-জি কেলেঙ্কারির প্রভাব তামিলনাডুতে পড়েছে, কারণ ডি এম কে-ই সরকার চালাতো। আবার কেরালায় দুর্নীতি বিষয় হয়েছে। কিন্তু, স্পেকট্রাম থেকে কমনওয়েলথ'র বদলে সেখানে পামোলিন তেল কেলেঙ্কারি বড় হয়েছে। বিশেষত সেই কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত জে ভি টমাসকে ভিজিল্যান্স কমিশনের প্রধানের পদ থেকে আদালত সরিয়ে দেওয়ায় বামপন্থীদের অবস্থান যুক্তিযুক্ত প্রমাণিত হয়েছে। একই সূত্র ধরে মনে করা হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে সব কিছু ছাপিয়ে বড় হয়েছে ৩৪বছর ধরে নির্বাচিত সরকারের পরিবর্তনের স্লোগান। শনিবার কংগ্রেস মুখপাত্র অভিষেক সিংভির ব্যাখ্যা, দুর্নীতি হয়েছে ঠিকই। তবে সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে। ফলে, কেন্দ্রের রাজনৈতিক জোটের ওপর থেকে ভরসা হারাননি মানুষ। বিরোধী নেতাদের বক্তব্য, সংসদে বিরোধীদের প্রবল প্রতিবাদ আর আদালতের সক্রিয়তার কারণেই চলছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ।

কিন্তু, সেটাই সব নয়। কারণ দু'বছরের ইউ পি এ-২ সরকার এর মধ্যেই দেশজোড়া ধর্মঘটের মুখে পড়েছে দু'বার। যেখানে শামিল হতে হয়েছে কংগ্রেসেরই শ্রমিক সংগঠন আই এন টি ইউ সি-কে। পেট্রোলের দামবৃদ্ধির পর ভোটে জেতা কেরালায় বামপন্থী ট্রেড ইউনিয়নের সঙ্গে পথে নামতে হয়েছে। স্পষ্টতই, দাম বৃদ্ধি এবং সরকারের লক্ষ কোটি টাকা চুরিতে মানুষের ক্ষোভ রয়েছে। সামজিক সুরক্ষামূলক প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারী ঔদাসিন্যে প্রশ্ন বাড়ছে, কমছে না। ৭ই জুলাই সারা দেশে ব্যাঙ্ক ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন ব্যাঙ্ককর্মীরা। 

সুবিধাবাদী নীতি বারেবার বাঁচাবে না কংগ্রেস বা তার শরিকদের। অথচ, আগামী তিন বছর সেই নীতিতেই চলার অভিমুখ স্পষ্ট করেছেন মনমোহন সিং থেকে প্রণব মুখার্জিরা।

মাড়গ্রামে তৃণমূলের বিজয় মিছিল খুন করলো প্রৌঢ়কে
মানুষ আক্রান্ত, ব্যবস্থা নিক প্রশাসন: বিমান বসু

নিজস্ব প্রতিনিধি

সিউড়ি ও কলকাতা, ২১শে মে— তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেওয়ার পর প্রথম সাংবাদিক সম্মেলনে যখন রাজ্যে শান্তি এসেছে বলে দাবি করে বলছিলেন 'এই শান্তিই কাম্য' তখন তৃণমূল কর্মীদের আক্রমণে মারাত্মক জখম এক প্রৌঢ় রামপুরহাট হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছিলেন। শনিবার তাঁর সেই লড়াইটুকুও শেষ হয়ে গেলো। তৃণমূলের আক্রমণে মারাত্মক জখম মহম্মদ খোদারাখা নামে ৬৬বছরের ওই প্রৌঢ়কে শনিবার যখন উপযুক্ত চিকিৎসার প্রয়োজনে রামপুরহাট হাসপাতাল থেকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিলো তখন পথেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি। 

'পরিবর্তনের' উল্লাসে মাতোয়ারা তৃণমূল কর্মীরা বিভিন্ন জেলায় সি পি আই (এম) কর্মীদের উপর লাগামছাড়া আক্রমণ নামিয়ে এনেছে। বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর থেকে তৃণমূল কর্মীদের হামলায় খুন হয়েছেন সি পি আই (এম)-র ৭জন কর্মী ও সমর্থক। তৃণমূলের অকথ্য অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে ৪জন পার্টি সমর্থক আত্মহত্যা করতেও বাধ্য হয়েছেন। তৃণমূল কর্মীদের অত্যাচার ও মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে শনিবারও বাঁকুড়ার পাত্রসায়রের সালনা গ্রামে আত্মহত্যা করেছেন উজ্জ্বল বাগদী। এই সময়ের মধ্যে তৃণমূলের আক্রমণে জখম হয়েছেন সি পি আই (এম) অনেক নেতা, কর্মী ও সমর্থক। 'পরিবর্তন'-র আনন্দে মত্ত তৃণমূল কর্মীদের উন্মত্ত তাণ্ডবে ঘরছাড়া হয়েছেন অসংখ্য মানুষ। জেলায় জেলায় তৃণমূল কর্মীদের এই তাণ্ডব যখন চলছে তখন রাজ্যে শান্তির পরিবেশ তৈরি হয়েছে বলে দাবি করছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জি। 

রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় এই হিংসা বন্ধে অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওবার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু। এদিন তিনি বলেন, রাজ্যের আইন শৃঙ্খলার অবনতি ঘটেছে। বিভিন্ন জায়গায় পার্টির নেতা, কর্মী, সমর্থকরা খুন হচ্ছেন। পার্টির কার্যালয়ে আক্রমণ করা হচ্ছে। মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। ঘরছাড়া হচ্ছেন। এই ধরনের হিংসা বন্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিক প্রশাসন। 

বিধানসভার নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতায় জিতেন নন্দী, বীরভূমের অজিত লোহার, বর্ধমানের রায়নার পূর্ণিমা ঘড়ুই, দুর্গাপুরের রামপ্রবেশ রায় ও মুন্দাকলা রায়, উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ার দহিরুদ্দিনের পর এবারে শহীদের তালিকায় যুক্ত হলো মহম্মদ খোদারাখার নাম। শুক্রবার তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জির মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ গ্রহণ উপলক্ষে তৃণমূল কর্মীরা বীরভূমের মাড়গ্রাম থানার শেরপুরে যখন মিছিল করছিল তখন তাদের সামনে পড়ে যান ওই গ্রামেরই গরিব কৃষক মহম্মদ খোদারাখা। জান্তব উল্লাসে ওই বৃদ্ধ গরিব কৃষকের উপর তৃণমূলের কর্মীরা ঝাঁপিয়ে পড়ে লোহার রড় দিয়ে মারতে থাকে। মারাত্মক জখম অবস্থায় ওই সি পি আই (এম) সমর্থককে পথে ফেলে রেখে মিছিল করে চলে যায় তৃণমূল কর্মীরা। পরে গ্রামবাসী ও পরিজনেরা খোদারাখাকে রামপুরহাট হাসপাতালে নিয়ে যায়। এদিন তাঁর অবস্থার আরো অবনতি ঘটায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাঁকে যখন বর্ধমান হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তখনই তাঁর মৃত্যু হয়। 

সি পি আই (এম) বীরভূম জেলা কমিটির সম্পাদক দিলীপ গাঙ্গুলি তৃণমূলের এই হামলার তীব্র নিন্দা করে বলেছেন, বিজয় মিছিল থেকে পরিকল্পিতভাবেই ওই প্রবীণ মানুষকে খুন করা হয়েছে। শুধুমাত্র সি পি আই (এম)-র সমর্থক হওয়ায় কমরেড খোদারাখাকে জীবন দিতে হলো বলে জানিয়েছেন পার্টির জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মতিউর রহমান। পার্টির জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ব্রজ মুখার্জিও এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা করে হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন। 

শনিবার উত্তর ২৪পরগনার স্বরূপনগর এলাকাতেও তৃণমূলের বিজয় মিছিল থেকে হামলা চালিয়ে মারধর করা হয়েছে ওই ব্লকের মৎসজীবী সমিতির সম্পাদক শংকর বিশ্বাসকে। তাঁর বাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। সি পি আই (এম) কর্মী রজ্জাকের চায়ের দোকানে হামলা চালিয়ে তাঁকেও দোকান থেকে টেনে বার করে মারধর করে তৃণমূলীরা। গোবিন্দপুরের দত্তপাড়ায় মারধর করা হয় বামপন্থী কর্মী নিমাই দাসকে। পূর্বপাড়ায় মোতিয়ার সরদারের পাট্টা পাওয়া জমিও দখল করেছে তৃণমূলীরা। পুলিস প্রশাসন সব জেনেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে স্থানীয় মানুষের অভিযোগ। বারাসতে সি পি আই (এম) কর্মী ও পঞ্চায়েত প্রধান মহম্মদ জলিল হোসেনের চায়ের দোকান ভেঙে দেওয়া হয়েছে। মারধর করা হয়েছে ধোকড়া গ্রামের পার্টি সমর্থক গোরাকে। মুর্শিদাবাদের জঙ্গীপুরেও এদিন তৃণমূল কংগ্রেস এবং কংগ্রেসের যৌথ মিছিল থেকে বাসস্ট্যান্ডের সি আই টি ইউ দপ্তরে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে। বোমা ছোঁড়া হয়েছে পার্টিকর্মীদের বাড়িতে। 

শুক্রবার রাতে বেহালার ১২৯নম্বর ওয়ার্ডের ২নং রবীন্দ্রনগরে সি পি আই (এম) কর্মী যুবক সুশান্ত ঘোষ যখন বাড়ি ফিরছিলেন, এলাকার তৃণমূলের দলবল তাঁকে আক্রমণ করে। হামলাকারীরা সুশান্ত ঘোষের মাথায় বুকে এবং তলপেটে লাথি ঘুষি মারতে থাকে। গণ্ডগোলের শব্দে বেরিয়ে এসে সুশান্তের মা ঘটনাটি দেখে চিৎকার করে ছেলের প্রাণ ভিক্ষা করতে করতে ছুটে যান। কিন্তু নৃশংস তৃণমূলীবাহিনী 'দিদি'র শপথ গ্রহণের উল্লাসে আত্মহারা হয়ে, সুশান্তের মাকেও মারধর করে। সংজ্ঞাহীন সুশান্তকে ফেলে দলবল এগিয়ে যায় পাশেই সি পি আই (এম) পার্টি সদস্য সোমনাথ দাসের বাড়িতে। সোমনাথ দাসকে বারবার ডেকে না পেয়ে তাঁর বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর করা হয়। এই আক্রমণের খবর পেয়ে পুলিস এলেও নিষ্ক্রিয় পুলিসবাহিনীর সামনেই সশস্ত্র তৃণমূল কর্মীরা তাণ্ডব চালাতে থাকে। এই সময় সুশান্ত ঘোষকে হাসপাতালে নিয়ে যাবার জন্য একটি আম্বুলেন্সকে খবর দেওয়া হয়। কিন্তু তৃণমূলবাহিনী সেই অ্যাম্বুলেন্সের চালককে মারধর করে। সেই সময় পার্টির নেতা গোপাল সমাদ্দার চালককে বাঁচাতে গেলে তাঁকেও মারধর করে দুষ্কৃতীর দল। 

ঐ একই সময় বেহালার গা লাগোয়া জোকা গ্রাম পঞ্চায়েতের মাগুরখালি গ্রামের বামপন্থী কর্মী শম্ভু হাতিকে প্রচণ্ড মারধর করে তৃণমূলের দুষ্কৃতীর দল। তাঁকে হুমকি দিয়ে বলা হয় ৫লক্ষ টাকা জরিমানা না দিলে গ্রাম ছাড়তে হবে। শম্ভু হাতি ঐ রাতেই আহত অবস্থায় গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হন। ১১৬নম্বর ওয়ার্ড এবং ১২৩নম্বর ওয়ার্ডে সি পি আই (এম)-র শাখা কার্যালয়ও এবং নাগরিক কমিটির অফিস ভেঙে দেয় তৃণমূলবাহিনী। ১২৩ ওয়ার্ডে পার্টির কার্যালয় দখল দখল করে নেয় তৃণমূল। শনিবার সকালে এই ঘটনা জানার পর ছুটে আসেন পার্টির নেতা কুমকুম চক্রবর্তী, কিশোর ঘোষ, গোপাল বারিক সহ স্থানীয় নেতৃবন্দ। এই ঘটনায় এলাকায় তীব্র উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এই ঘটনায় বেহালা থানায় এফ আই আর দায়ের করা হয়েছে।

শুধু এই ঘটনাই নয়। নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর থেকেই বেহালার বিভিন্ন এলাকায় একের পর পার্টির কর্মী ও সমর্থকদের ওপর আক্রমণ করছে তৃণমূলবাহিনী। জোকার কৃষ্ণনগর (মিদ্দিরচক) গ্রামে তৃণমূলের আক্রমণে প্রচণ্ড আহত হয়েছেন লতিকা মণ্ডল, গোবিন্দ মালিক, বিশ্ব সর্দার সহ আরও অনেকে। আক্রান্ত হয়ে গ্রামের বাসিন্দা শ্যামল মাকাল, দেবদাস মণ্ডল, আই সি ডি এস কর্মী মার্থা বেবী মণ্ডল, চকরামনগর গ্রামের পার্টিনেতা এবং জোকা -১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান আনন্দ পাত্র বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। আনন্দ পাত্রের বাবা অজিত পাত্রকেও মারধর করা হয়। জিয়াদারগোট গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্যা স্বাগতা মণ্ডলকেও পদত্যাগ করবার জন্য হুমকি দিয়ে তাঁর ভাসুর পিটার মণ্ডলকে মারধর করে তৃণমূলের দুষ্কৃতীর দল। একইভাবে রামজীবনপুর গ্রামের কাঙাল ভুঁইয়া এবং গোপাল মালের বাড়ি, মল্লিকপুর গ্রামের সুচিত্রা খাঁ, প্রেমচাঁদ নাড়ু, পালান খাঁ, অসীম খাঁ, সুশান্ত খাঁ, দিলীপ খাঁ, বাবলু প্রামাণিকের বাড়ি ভাঙচুর করে তৃণমূলীরা। তৃণমূলীদের ছোঁড়া বোমায় জখম হয়েছেন সনৎ পাত্র। কৃষ্ণনগর গ্রামের প্রাক্তন গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য পিটার দুলুই-এর বাড়িতে বোমা মারা হয়। একইভাবে দুলালপুর গ্রামের অমূল্য বরের অটো লক্ষ্য করে এবং প্রশান্ত বরের বাড়িতে বোমা মারে তৃণমূলের দুষ্কৃতী দল।

বেহালার মতোই সন্ত্রাস সৃষ্টির চেষ্টা চলছে কসবার তপসিয়া সেকেন্ড লেন এলাকায়। এই এলাকায় বেশ কয়েকটি বুথে তৃণমূল পরাজিত হয়েছে। সেই আক্রোশেই তৃণমূল নেতা জাভেদ খানের দলবল ফল ঘোষণার পর থেকেই এলাকায় এলাকায় সন্ত্রাস সৃষ্টি করে সি পি আই (এম) কর্মীদের ওপর আক্রমণ চালাচ্ছে। তপসিয়া সেকেন্ড লেনের বাসিন্দা মহম্মদ আকবর, আখতার হোসেন, শেখ গোরা, মুজফফ্‌র হোসেন তৃণমূলী আক্রমণে বর্তমানে ঘরছাড়া। এর সাথে সাথে তৃণমূল বিধায়কের চক্রান্তে এই এলাকার ১৫জন বামপন্থী কর্মীর নামে তিলজলা থানায় মিথ্যা মামলা করা হয়েছে। পুলিস এই কর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে তল্লাশির নামে হয়রানি করছে বলে অভিযোগ। 

শহরের বিভিন্ন এলাকায় তৃণমূলের এই হামলা এবং সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তীব্র ধিক্কার জানিয়েছে কলকাতা জেলা বামফ্রন্ট। এই হামলার প্রতিবাদে এবং এলাকায় এলাকায় অবিলম্বে শান্তি শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার দাবিতে আগামী সোমবার কলকাতার পুলিস কমিশনার এবং মঙ্গলবার দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা পুলিস সুপারের কাছে ডেপুটেশন ও স্মারকলিপি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কলকাতা জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক দিলীপ সেন।

http://anandabazar-unicode.appspot.com/proxy

দ্বিতীয় ইউপিএ-র তিনে পা

সাফল্যকে ঢেকেছে মূল্যবৃদ্ধি ও দুর্নীতি

শঙ্খদীপ দাস • নয়াদিল্লি

দ্বিতীয় দফায় পার হয়ে গেল আরও একটা বছর। আগামিকাল কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউপিএ সরকার পা দিচ্ছে তৃতীয় বছরে। সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন সাত রেস কোর্স রোডে এক নৈশভোজে মিলিত হবেন দ্বিতীয় ইউপিএ-র শরিক দলের নেতা-সাংসদরা। তবে এ রাজার পরে কানিমোঝিও জেলে যাওয়ায় এই অনুষ্ঠানে সম্ভবত থাকবে না ডিএমকে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিনিধি হিসেবে থাকবেন তৃণমূল কংগ্রেসের সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই অনুষ্ঠানেই আরও এক বার সরকারের বার্ষিক 'রিপোর্ট কার্ড' প্রকাশ করবেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। ইউপিএ সরকারের প্রধান হিসেবে এই নিয়ে টানা সপ্তম বার এই 'রিপোর্ট কার্ড' প্রকাশ করবেন তিনি।

কিন্তু কী রিপোর্ট দেবেন প্রধানমন্ত্রী?

শনিবার নয়াদিল্লিতে এক অনুষ্ঠানে।

স্পষ্ট ভাবে জানা যাবে কাল সন্ধ্যাতেই। কিন্তু তার আগে পর্যালোচনা করতে গেলে ফিরে যেতে হবে গত বছর ঠিক এমনই দিনটিতে। ২২ মে। আর তার পর থেকে বছরভরের ঘটনা পরম্পরায়। সে দিন সাত সকালেই ম্যাঙ্গালোর বিমানবন্দরে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় দেড়শোরও বেশি যাত্রীর। স্বাভাবিক ভাবেই বাতিল হয়েছিল দ্বিতীয় ইউপিএ-র প্রথম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান। সরকার তথা কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার কথায়, "বলতে গেলে ইউপিএ-র 'গ্রহ-দশার' শুরু সে দিন থেকেই। আর্থিক বছরের গোড়া থেকে এক দিকে খাদ্যের চড়া দাম, অন্য দিকে আন্তর্জাতিক বাজারে পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির জের। এই দুইয়ের ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই একের পর দুর্নীতির ঘটনা ফাঁস। শুরুতে কমনওয়েলথ গেমস আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়ে বিতর্ক এবং তার সূত্র ধরেই গেমস আয়োজনকে কেন্দ্র করে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ।

সেই শুরু। এর পরেই মহারাষ্ট্রে আবাসন কেলেঙ্কারি ও স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারি নিয়ে হইচই। পরের পর অভিযোগ নিয়ে সংসদে তোলপাড়। স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারির জেরে ইস্তফা দিতে হয় খোদ টেলিকম মন্ত্রী এ রাজাকে। এখানেও শেষ নয়। কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশনার পদে পি জে টমাসের নিয়োগ নিয়ে সরকার-বিরোধী চাপান-উতোরের মধ্যেই সেই নিয়োগ বাতিল করে দিল দেশের শীর্ষ আদালত! দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের দ্বিতীয় বছরটা প্রধানমন্ত্রী-সহ ইউপিএ শীর্ষ নেতৃত্বের কেটে গিয়েছে কার্যত এই সব অভিযোগের আগুন নেভাতে। এমনকী কাল বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানের ২৪ ঘণ্টা আগেও 'মোস্ট ওয়ান্টেড' অপরাধীদের তালিকায় গলদ নিয়ে কাঠগড়ায় কেন্দ্র।

প্রগতি-পত্র

সরকার কেমন

ভাল ৪১%মোটামুটি ৩৮% খারাপ ১৯%

কোথায় দুর্বলতা

মূল্যবৃদ্ধি ৬৬%দারিদ্র দূরীকরণ ৫০% দুর্নীতি ৪৫%

এখনই নির্বাচন হলে

কংগ্রেসকে ভোট ৩০%

বিজেপিকে ভোট ২৩%

(দেশের ২৮টি শহরের প্রায় ৯ হাজার লোকের মধ্যে
এই সমীক্ষা চালিয়েছে স্টার নিউজ-এ সি নিয়েলসেন)

২০০৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে সার্বিক ভাবে এই প্রথম এক অদ্ভুত পরিস্থিতির মুখোমুখি প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের নেতৃত্বাধীন সরকার। প্রশ্নের মুখে ইউপিএ সরকারের জনপ্রিয়তাও।

তবে কংগ্রেসের এক প্রথম সারির নেতার বক্তব্য, এগুলো খুব সাধারণ সঙ্কট। এ ধরনের সঙ্কট আসে আবার তা কেটেও যায়। তাঁর কথায়, "ইউপিএ-র প্রথম মেয়াদের কথাই যদি ধরা যায়, ভারত-মার্কিন পরমাণু চুক্তি নিয়ে তখনও কম সঙ্কট হয়নি। কিন্তু এ বার সত্যিই যদি কিছু হয়ে থাকে তা হল, কেন্দ্রে ইউপিএ সরকারে এই প্রথম প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের দিকে আঙুল উঠল।" সিভিসি পদে পি জে টমাসের নিয়োগ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন কমিটির দিকে আঙুল তুলেছে দেশের শীর্ষ আদালতও। আর তাতেই এই নিয়োগ নিয়ে প্রশ্নচিহ্নের মুখে পড়েছে প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকাও। শুধু তাই নয়, সাম্প্রতিক কালে এই প্রথম একাধিক সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রশ্ন উঠেছে। কখনও সিএজি-র বিরুদ্ধে, কখনও সিভিসি-র। যা এই প্রতিষ্ঠানগুলিকেই আখেরে দুর্বল করেছে। এমনকী সংসদের পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির বৈঠকও রাজনৈতিক ফুটবল খেলার ময়দানে পরিণত হয়েছে।

অস্বস্তির শেষ এখানেই নয়। ঘরোয়া আলোচনায় কংগ্রেস নেতারা স্বীকার করে নিচ্ছেন, যে ভাবে রাজনীতিক ও কর্পোরেট জগতের আঁতাঁত প্রকাশ হয়ে পড়েছে, এ রাজা থেকে শুরু করে কলমডী, কানিমোঝির মতো রাজনৈতিক নেতা ও কর্পোরেট কর্ণধাররা দুর্নীতির অভিযোগ জেলবন্দি হয়েছেন, তাতে সামগ্রিক ভাবে রাজনৈতিক নেতৃত্বের ওপর অনাস্থা তৈরি হয়েছে। নাগরিক সমাজ পথে নেমে চাপ বাড়িয়েছে বিচারব্যবস্থার ওপর। তার জেরে একের পর এক মামলায় সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর পর্যবেক্ষণ দিয়েছে আদালত। আর সব মিলিয়ে সাংবিধানিক গণতন্ত্রে প্রশাসন ও বিচারব্যবস্থার মধ্যে ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে।

স্বাভাবিক ভাবেই এই তুমুল অস্থিরতায় ধাক্কা খেয়েছে সরকারের সংস্কার কর্মসূচি। পেট্রোলের মূল্য নির্ধারণ ব্যবস্থার বিনিয়ন্ত্রণ ছাড়া আর্থিক সংস্কার বিশেষ হয়নি। এমনকী জমি অধিগ্রহণ সংশোধনী বিল, পুনর্বাসন নীতি বিল, সাম্প্রদায়িক হিংসা প্রতিরোধ বিলের মতো গুরুত্বপূর্ণ একাধিক বিল সংসদে পেশ করার সুযোগও হয়নি।

তবে দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের সবটাই নেতিবাচক নয় বলে মনে করছেন অনেকে। একের পর এক দুর্নীতির ঘটনা ফাঁস ও তা নিয়ে নিত্যদিন নতুন নতুন সব উপসর্গের মোকাবিলা করার মধ্যেই প্রশাসনিক দিক থেকে একাধিক ইতিবাচক বার্তাও দিতে পেরেছে এই সরকার। গত এক বছরে দেশে নিরাপত্তার দিক থেকে কোনও সমস্যা তৈরি হয়নি এবং একই সঙ্গে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিস্থিতিও সন্তোষজনক বলেই মনে করছেন ইউপিএ নেতৃত্ব। সরকারের বক্তব্য, এই সময়ের মধ্যে কোনও সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনাও ঘটেনি। একশো দিনের কাজ থেকে শুরু করে সরকারের সামাজিক প্রকল্পগুলির রূপায়ণ ও সেই সব প্রকল্পে অর্থের যথাযথ ব্যবহারের হারও এই এক বছরে বেড়েছে। খাদ্য সুরক্ষা আইন প্রণয়নের পথেও অনেকটাই এগিয়েছে সরকার। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মহলে নয়াদিল্লির কূটনৈতিক অবস্থান আগের তুলনায় অনেকটাই মজবুত হয়েছে। গত এক বছরেই ভারত সফরে এসেছেন মার্কিন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা-সহ রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য সব দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা। আবার বাংলাদেশ, নেপালের মতো রাষ্ট্রের সঙ্গেও সম্পর্কের উন্নতি হয়েছে। পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের উল্লেখযোগ্য উন্নতি না হলেও বিশ্বকাপ ক্রিকেট সেমিফাইনালে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ দেখার জন্য পাক প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্টকে আমন্ত্রণ জানিয়ে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বরফ গলানোর কাজে অনেকটাই সফল প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ।

কিন্তু গত এক বছরের সব সাফল্যই চাপা পড়ে গিয়েছে কখনও মূল্যবৃদ্ধি-বিতর্কে, কখনও বা দুর্নীতি প্রশ্নে চাপান-উতোরে। এই পরিস্থিতির মধ্যে ইউপিএ তথা কংগ্রেসের সামনে এক মাত্র আশার আলো বলতে পশ্চিমবঙ্গ, কেরল ও অসমে বিধানসভা ভোটে ভাল ফল। সেই প্রেক্ষিতে দাঁড়িয়ে কাল প্রধানমন্ত্রী আগামী দিনের জন্য কী দিশা দেন, সেটাই দেখার। রিপোর্ট কার্ডের তুলনায় তা নিয়েই এখন বেশি উৎসাহ রাজধানীর রাজনৈতিক অলিন্দে।

রাহুলের সমর্থনে মহিলা কমিশন, মায়াবতী খাপ্পা

নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি

রাহুল গাঁধীর সমর্থনে এগিয়ে এল জাতীয় মহিলা কমিশন। আর তা নিয়েই কংগ্রেস-বসপা চাপানউতোর ফের নতুন মাত্রা পেল। কমিশনকে 'কংগ্রেসের এজেন্ট' হিসাবে বর্ণনা করে অবিলম্বে তা ভেঙে দেওয়ার দাবি জানালেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী।

উত্তরপ্রদেশের ভাট্টা পারসোলে জমির দখল নিতে গ্রামবাসীদের উপর পুলিশি অত্যাচারের যে অভিযোগ রাহুল গাঁধী করেছিলেন, আজ কার্যত সেই দাবিতেই সিলমোহর দিল জাতীয় মহিলা কমিশন। ওই এলাকা ঘুরে এসে কমিশনের কার্যনির্বাহী সভাপতি ইয়াসমিন আব্রার আজ বলেন, "গ্রামবাসীদের উপর উত্তরপ্রদেশ পুলিশ যে অত্যাচার চালিয়েছে, তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। গ্রামবাসীদের পুড়িয়ে মারা হয়েছে, এমন অভিযোগও পাওয়া গিয়েছে। অবিলম্বে গোটা ঘটনার তদন্ত সিবিআইয়ের হাতে যাওয়া উচিত।"

এর আগে রাহুল গাঁধীও দাবি করেছিলেন, ভাট্টা পারসোলে একটি ছাই ঢিপি থেকে মানুষের অস্থি পাওয়া গিয়েছে। সেখানে জমি দখলের জন্য পুলিশ গ্রামবাসীদের উপরে অকথ্য নির্যাতন চালাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সঙ্গে দেখা করেও রাহুল এই অভিযোগ করেন। কিন্তু উত্তরপ্রদেশের ক্যাবিনেট সচিব ফরেনসিক রিপোর্ট উদ্ধৃত করে জানিয়ে দেন, ওই ছাইয়ের ঢিপিতে কোনও মানুষের দেহাবশেষ মেলেনি। মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী বলেন, রাজ্য সরকারকে হেয় করার জন্য রাহুল 'মিথ্যা' অভিযোগ করছেন। কিন্তু আজ মহিলা কমিশন ফের বিষয়টি নিয়ে সরব হওয়ায় নতুন করে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে।

ভাট্টা পারসোলের ঘটনার পরেই কমিশনের কার্যনির্বাহী সভাপতি ইয়াসমিনের নেতৃত্বে এগারো সদস্যের একটি দল ওই এলাকায় যান। কমিশনের রিপোর্টে বলা হয়েছে, ঘটনার দিন ১০-১২ জন পুলিশ গ্রামে ঢুকে মহিলাদের উপর চড়াও হয়। ওই মহিলাদের নগ্ন করে মিছিল করানো হয়, এমন অভিযোগও পেয়েছে কমিশন। পুলিশের বিরুদ্ধে পুড়িয়ে মারার অভিযোগও এসেছে। ঘটনার পরে এত দিন কেটে গেলেও মানুষ যে আতঙ্কে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করতে যাননি, সে কথাও উল্লেখ করেছে কমিশন। তাদের ওই রিপোর্টটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে দ্রুত জমা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে কমিশন। তবে ওই ছাইয়ের ঢিপি থেকে কোনও অস্থি মহিলা কমিশন সংগ্রহ করেছে কি না, সেই প্রশ্নের জবাব সরাসরি দিতে চাননি ইয়াসমিন। তিনি বলেন, "সব তথ্য সংবাদমাধ্যমে জানানো সম্ভব নয়। ওই গ্রামে যে সব অভিযোগ আমরা পেয়েছি, তার সত্যতা যাচাই করতে গেলে অবিলম্বে সিবিআইকে দিয়ে গোটা ঘটনার তদন্ত করা দরকার।"

জাতীয় মহিলা কমিশন রাহুলের অভিযোগকে সমর্থন করার পরে, আজ সোজাসুজি কমিশনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী। তিনি অভিযোগ করেন, মহিলা কমিশন আসলে কংগ্রেস নেতৃত্বকে খুশি করার জন্যই এই রিপোর্ট দিয়েছে। মায়াবতীর বক্তব্য, মহিলা কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। কমিশন এমন ভাবে কাজ করছে, যেন তারা কংগ্রেসের এজেন্ট। অবিলম্বে মহিলা কমিশন ভেঙে দেওয়ার দাবিও করেছেন তিনি। বিগত কয়েক দিন ধরেই জমি অধিগ্রহণের প্রশ্নে সরগরম রয়েছে উত্তরপ্রদেশের রাজনীতি। এক দিকে কংগ্রেস নেতৃত্ব যেমন জমির লড়াইকে ধরে সরকার-বিরোধী আন্দোলনকে অভিমুখ দিতে চাইছেন, তেমনি মায়াবতীও নিজের রাজ্যে রাহুল তথা কংগ্রেসকে ঠেকাতে মরিয়া। উত্তরপ্রদেশে রাহুল গ্রেফতার হওয়ার পরের দিন মায়াবতী সাংবাদিক সম্মেলন করে সাফ জানিয়ে দেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই কৃষকদের খেপিয়ে তোলা হচ্ছে। তবে কংগ্রেস নেতৃত্ব মনে করছে, আজ যে ভাবে মহিলা কমিশন উত্তরপ্রদেশের সরকারের সমালোচনা করেছে, তাতে যথেষ্ট বেকায়দায় পড়েছে মায়াবতী সরকার

সিবিআই-তালিকাতেই ত্রুটি, মানলেন চিদম্বরম

নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি

সামা নিধনের পর ইসলামাবাদকে দেওয়া জঙ্গি-তালিকা নিয়ে ঘরে-বাইরে চাপ সামলাতে সক্রিয় হল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। আজ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, 'মোস্ট ওয়ান্টেড' জঙ্গি তালিকায় ত্রুটি থাকার বিষয়টি মন্ত্রকের পক্ষে অত্যন্ত 'বিড়ম্বনাজনক।' বিষয়টিকে 'নিন্দনীয়' হিসেবে আখ্যা দিয়ে চিদম্বরম স্বীকার করে নিয়েছেন, সিবিআই-এর তরফ থেকে যে তালিকা তাঁদের কাছে এসেছিল তাতেই ত্রুটি ছিল। তবে এই ত্রুটি নিয়ে কারও কাছে কোনও ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না বলে জানিয়েছেন তিনি। এ কথা বলার পাশাপাশি পাকিস্তানের নাম না করে সন্ত্রাসবাদ প্রসঙ্গে ইসলামাবাদের উপর চাপ তৈরি করতে চেয়েছেন চিদম্বরম। তাঁর কথায়, বিশ্বের মধ্যে সব চেয়ে 'সমস্যাজনক প্রতিবেশী রাষ্ট্র'কে নিয়ে বসবাস করতে হয় ভারতকে।

পাকিস্তানের উপর চাপ বাড়াতে এর আগে যে জঙ্গি-তালিকা নয়াদিল্লির পক্ষ থেকে দেওয়া হয় তাতে নাম থাকা অন্তত দু'জন ভারতেই রয়েছে বলে প্রকাশিত হওয়ার পর বিতর্ক তুঙ্গে ওঠে। পরিস্থিতি সামলাতে পরে একটি সংশোধিত তালিকা দেওয়ার কথা ভাবছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। কিন্তু এই ঘটনার ফলে এক দিকে যেমন বিজেপি ঘরোয়া ভাবে আক্রমণ শানাচ্ছে চিদম্বরমের দিকে, তেমনই আন্তর্জাতিক মহলেও নয়াদিল্লির পরিস্থিতিও কিছুটা লঘু

হয়েছে বলেই মনে করছে ওয়াকবিহাল শিবির। যদিও পাকিস্তানের বিদেশ দফতর সূত্রে বলা হয়েছে, ভারত যে তালিকা দিয়েছে, তাকে ইসলামাবাদ গুরুত্ব দিয়েই দেখছে। এই তালিকায় কার নাম থাকবে, কারটা থাকবে না, সেটা সম্পূর্ণ ভারতের ব্যাপার।

পাকিস্তান যা-ই বলুক, এই 'বিড়ম্বনা' কাটাতে আজ সরব হয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তাঁর কথায়, "এটা এমন কোনও ঘটনা নয় যে কারও কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। আমরা ইতিমধ্যেই বলেছি, ত্রুটির কারণেই তালিকাটি ঠিক মতো তৈরি হয়নি। বিষয়টি নিন্দনীয়। এর পরেও তর্ক চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার কোনও অর্থ হয় না।" চিদম্বরমের কথায়, "আমি বরাবরই বলি যে, আমরা সম্ভবত বিশ্বের সব চেয়ে সমস্যাজনক প্রতিবেশীদের নিয়ে বাস করছি। এই সব রাষ্ট্রের সরকারগুলি খুবই দুর্বল। এই পরিস্থিতি সামলানোই আমাদের কাছে সব সময় বড় চ্যালেঞ্জ।" চিদম্বরমের আক্রমণের নিশানা যে চিনের দিকেও, এই কথা থেকে সেটাও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট শিবির। ওসামা-পরবর্তী পর্যায়ে আন্তর্জাতিক মহলে কোণঠাসা পাকিস্তানের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়েই রেখেছে বেজিং। বিষয়টির দিকে সতর্ক নজর রাখছে সাউথ ব্লক। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য, "এই চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড়িয়ে আমরা নিরাপত্তা বাহিনীকে সতর্ক থাকতে বলেছি। বলেছি দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব এবং নিরাপত্তা রক্ষা করতে।"

এই ভাবে পাকিস্তানের উপরে কূটনৈতিক চাপ বাড়ানোর পাশাপাশি মনমোহন সরকার কিন্তু পূর্বনির্ধারিত আলোচনার দরজা খোলাই রাখছে। আজ এবং গত কাল রাওয়ালপিণ্ডিতে দু'দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে স্যার ক্রিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। ভবিষ্যতে এই আলোচনা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য একটি 'নন পেপার'-এর বিনিময় হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

রাজ্যপালকে সরানোর দাবিতে পথে বিজেপি

নিজস্ব সংবাদদাতা • বেঙ্গালুরু

র্নাটকে বিজেপি সরকার বনাম রাজ্যপালের লড়াই ফের জমে উঠল। আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে রাজ্যপাল এইচ আর ভরদ্বাজকে অপসারণের দাবিতে পথে নামলেন বিজেপি নেতা, কর্মী ও সমর্থকরা।

মুখ্যমন্ত্রী ইয়েদুরাপ্পা বলেন, রাজ্যপাল কংগ্রেস ও জেডিইউ-এর সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে নির্বাচিত সরকার ফেলে দিতে চাইছেন। এটা কোনও অবস্থাতেই মেনে নেওয়া যায় না। হয় রাজ্যপাল নিজে থেকে পদত্যাগ করুন, নয় তাঁকে এই দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হোক।"

আজ থেকেই রাজ্য জুড়ে 'রাজ্যপাল হটাও, কর্নাটক বাঁচাও' আন্দোলনে নেমেছে বিজেপি। গত কালই রাজ্যের সমস্ত শীর্ষ নেতাকে ডেকে আন্দোলনের প্রস্তুতি সেরে নিয়েছেন ইয়েদুরাপ্পা। আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য দু'টি বিশেষ দল গড়েছেন তিনি। রাজ্যের ১১টি জেলায় আন্দোলন পরিচালনা করবে তারা। ইয়েদুরাপ্পা অভিযোগ জানিয়েছেন, রাজ্যপাল রাজভবনে বসে বিজেপি সরকারকে সরানোর চক্রান্ত এঁটে চলেছেন। তাই বিজেপি'র এ বারের লক্ষ্য সর্বাত্মক আন্দোলনে নেমে রাজ্যপালকে পদচ্যুত করা।

রাজ্যপালের অপসারণের দাবিতে আজ সকালে গাঁধীর মূর্তির পাদদেশে অবস্থান বিক্ষোভে সামিল হন বিজেপি কর্মীরা। উপস্থিত ছিলেন বেশ কয়েক জন মন্ত্রীও।

ইয়েদুরাপ্পা বলেন, "গত তিন বছর ধরে রাজ্যপাল গোপনে ও প্রকাশ্যে ক্রমাগত রাজ্য সরকারের সমালোচনা করে যাচ্ছেন। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সরকারকে কোনও গঠনমূলক পরামর্শ দেওয়ার সদিচ্ছা নেই তাঁর।"

জুন মাসের গোড়ায় বিধানসভার বাজেট অধিবেশন যাতে বসতে পারে সে জন্য বার বার রাজ্যপাল এইচ আর ভরদ্বাজের কাছে আবেদন জানিয়ে আসছিল ইয়েদুরাপ্পা সরকার। কিন্তু তাতে কান দেওয়ার প্রয়োজন করেননি রাজ্যপাল। সেই সময়ে ইয়েদুরাপ্পা এমন অভিযোগও করেন যে কংগ্রেস ও জেডিইউ-এর সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে রাজ্যে নির্বাচিত সরকারকে ফেলে দিয়ে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির চেষ্টায় রয়েছেন রাজ্যপাল। পরিস্থিতি অত্যন্ত খারাপ দিকে যাচ্ছে দেখে মধ্যস্থতায় নামে কংগ্রেস হাইকম্যাণ্ড। তখনকার মতো ইয়েদুরাপ্পাকে 'বন্ধু' সম্বোধন করে কথা বলতে ডেকে নেন রাজ্যপাল। ২ জুন অধিবেশন ডাকার ব্যপারে আশ্বাসও দেন। তার পর যে কে সেই। অগত্যা আন্দোলনের পথেই গিয়েছে বিজেপি।

জেলে বিশেষ সুবিধা পাচ্ছেন না কানিমোঝি

সংবাদসংস্থা • নয়াদিল্লি

নিজের বিলাসবহুল বাংলো ছেড়ে এখন তিহার জেলে রয়েছেন তিনি। তামিলনাড়ুর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী করুণানিধির মেয়ে ও ডিএমকে সাংসদ কানিমোঝি সেখানে কোনও বিশেষ সুবিধা পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন জেল কর্তৃপক্ষ।

জামিন পেতে দিল্লি হাইকোর্টে আবেদন জানাবেন কানিমোঝি। আগামী সপ্তাহে এই আবেদন পেশ করা হবে বলে জানিয়েছেন তাঁর আইনজীবীরা। টু জি স্পেকট্রাম মামলায় বিশেষ আদালত গত কাল কানিমোঝির জামিনের আবেদন বাতিল করে দেয়। তার পরে তিহার জেলে নিয়ে যাওয়া হয় কানিমোঝিকে।

আদালতে কানিমোঝির মা রজতী আম্মাল।— পিটিআই

আজও বিশেষ আদালতে হাজির হয়েছিলেন কানিমোঝি। জামিনের আবেদন খারিজ হওয়ার পরে গত কাল আদালত চত্বরেই ভেঙে পড়েছিলেন ডিএমকে নেত্রী। কিন্তু, এ দিন স্বামী অরবিন্দন ও ডিএমকে সমর্থকদের দেখে তাঁর মুখে একটু হাসি ফিরে আসে। বরং কানিমোঝিকে দেখে ভেঙে পড়েন তাঁর মা রজতী আম্মাল। আদালতের লক-আপ রুমে কানিমোঝিকে নিয়ে যাওয়ার সময়ে রজতী আম্মালকে তাঁর সঙ্গে আসতে দেননি উপস্থিত বন্ধুবান্ধবরা। তবে লক-আপ রুম পর্যন্ত কানিমোঝির সঙ্গেই ছিলেন তাঁর স্বামী অরবিন্দন ও ছেলে অদ্বৈতন। লক-আপে ঢোকার আগে ছেলেকে আদরও করেন তিনি। আজ আদালতে হাজির ছিলেন স্পেকট্রাম মামলায় অন্য অভিযুক্ত প্রাক্তন টেলিকম মন্ত্রী এ রাজা। হাজির ছিলেন ডিএমকে নেতা টি আর বালু ও নেপোলিয়নও। মামলায় অন্য দুই অভিযুক্ত আসিফ বালওয়া ও রাজীব অগ্রবালের জামিন নিয়ে সিদ্ধান্ত ২৪ মে পর্যন্ত পিছিয়ে দিয়েছে বিশেষ আদালত।

প্রবল ঝড়-বৃষ্টিতে জনজীবন বিপর্যস্ত

নিজস্ব সংবাদদাতা • পটনা

মিনিট চল্লিশেকের প্রবল ঝড়ে বিপর্যস্ত হয়ে গেল পটনা। বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের খুঁটি ও গাছ পড়ে বিস্তীর্ণ এলাকা বিদ্যুৎহীন।

আজ সকাল এগারোটা নাগাদ চরাচর অন্ধকার করে ঘণ্টায় প্রায় ১০০ কিলোমিটার বেগে ঝড় ওঠে পটনা-সহ দক্ষিণ বিহারের বেশ কিছু অঞ্চলে। ঝড়ের সঙ্গে নামে মুষলধারে বৃষ্টিও। ঝড়ের দাপটে অনেক জায়গায় বাইক আরোহীরা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে যান রাস্তাতেই। তবে বড় ধরনের কোনও দুর্ঘটনা ঘটেনি। পুলিশ সূত্রে খবর, পটনার প্রায় ২০-২৫টি জায়গায় গাছ এবং বিদ্যুৎস্তম্ভ ভেঙে পড়ায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। প্রায় পুরো শহরেই তার পর থেকে বিদ্যুৎহীন।

আবহাওয়া দফতর সূত্রে ঝড়-বৃষ্টির পূর্বাভাস ছিলই। শুধু বিহারে নয়, সারা উত্তর ভারতেই ঝড়-বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। আবহাওয়া দফতরের এক কর্তার কথায়, "আমরা যা ভেবেছিলাম, তার থেকে ঝড় অনেক বেশিই হয়েছে।"

ঝড়-বৃষ্টিতে জনজীবন কার্যত অচল হয়ে পড়লেও প্রচণ্ড গরম থেকে অবশ্য স্বস্তি পেয়েছে শহরবাসী। ঝড়ের সঙ্গে আজ প্রায় ৩৫ মিলিমিটার বৃষ্টিও হয়েছে। ফলে অসহ্য গরম থেকে মুক্তি পেয়েছে পটনা এবং আশপাশের অঞ্চল। এক ধাক্কায় তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে গিয়ে তিরিশের আশপাশে ঘোরাফেরা করছে। আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, আগামী দু'এক দিনের মধ্যে ফের এ রকম ঝড়-বৃষ্টি হতে পারে।

ওড়িশায় রেল লাইন ওড়াল মাওবাদীরা

সংবাদসংস্থা • ভুবনেশ্বর

মাওবাদীদের ডাকা দু'দিনের বন্‌ধের প্রথম দিন শান্তিপূর্ণ ভাবে কাটল না। ওড়িশার সুন্দরগড় জেলায় ল্যাণ্ডমাইন বিস্ফোরণ ঘটিয়ে রেললাইনের একাংশ উড়িয়ে দিল তারা। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ১২ টি ডাম্পারও। রেল সূত্রে খবর, রৌরকেলা থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরের এক জায়গায় ঘটানো হয়েছে বিস্ফোরণ। তার ফলে রেনজেদা ও রক্সির মধ্যে রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘটনায় কেউ হতাহত হননি। এক পণ্যবাহী ট্রেনের সতর্ক চালক রেললাইন ক্ষতিগ্রস্ত দেখে ব্রেক কষায় বড় রকমের দুর্ঘটনা এড়ানো গিয়েছে। রৌরকেলার ইস্পাত কারখানায় আকরিক নিয়ে আসা পণ্যবাহী ট্রেন এবং রৌরকেলা ও কিরবুর মধ্যে যাতায়াত করা যাত্রিবাহী ট্রেনের যাতায়াত বিঘ্নিত হয়েছে। সুন্দরগড় জেলার চুনাঘাটির কাছে ২১৫ নম্বর জাতীয় সড়কে ১২ টি ডাম্পার পুড়িয়ে দিয়েছে মাওবাদীরা।

মাওবাদীদের ঘটানো বিস্ফোরণে সুন্দরগড়ে ক্ষতিগ্রস্ত রেললাইন। শনিবার। — উত্তমকুমার পাল

নিরাপত্তার বাড়াবাড়িতে অসন্তুষ্ট হয়ে মাওবাদীরা এই বন্‌ধ ডেকেছিল। যদিও মাওবাদী উপদ্রুত এলাকায় নিরাপত্তার কড়াকড়ি ছিল চোখে পড়ার মতো। বন্‌ধের জেরে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়েছে। সুন্দরগড়ের বোনাই, কোইডা ও বোলাঙ্গ এলাকায় প্রায় সমস্ত দোকানপাট বন্ধ ছিল। মালকানগিরি, কোরাপুট, গজপতি ও কন্ধমাল জেলায় রাস্তায় যানবাহন প্রায় ছিল না। যাত্রীরা তার ফলে দুর্ভোগের মধ্যে পড়েন।

পঞ্চায়েত প্রার্থীকে ধর্ষণ করে খুন বিহারে

নিজস্ব সংবাদদাতা • পটনা

ঞ্চায়েত নির্বাচনকে ঘিরে রক্তাক্ত হল বিহার। কাল পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রার্থী এক মহিলাকে ধর্ষণ করে খুন করার অভিযোগ উঠেছিল। আজ মুখিয়া নির্বাচনের এক প্রার্থীকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা করে কিছু দুষ্কৃতী। গুলিতে সতীশ সিংহ নামে ওই প্রার্থী গুরুতর জখম হয়েছেন। পুলিশ সূত্রে খবর, আজ সকাল আটটা নাগাদ পটনার কঙ্কড়বাগে সতীশ সিংহের উপরে হামলা চালায় দু'জন দুষ্কৃতী। বাড়ি থেকে সতীশ যখন গণনা কেন্দ্রের দিকে যাচ্ছিলেন, সে সময়েই দু'জন অজ্ঞাতপরিচয় দুষ্কৃতী এসে গুলি চালায়। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলেও সতীশ গুরুতর জখম হয়েছেন।

অন্য দিকে, কাল রাতে পটনারই ফুলওয়ারিশরিফ এলাকায় এক মহিলাকে ধর্ষণ করে খুন করেছে কয়েক জন দুষ্কৃতী। পুলিশ জানিয়েছে, আজ সকালে এক খেত থেকে রেখা দেবী নামের ওই প্রার্থী মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ফুলওয়ারিশরিফের ডিএসপি রাকেশ দুবে জানিয়েছেন, তিন জনকে ঘটনায় যুক্ত সন্দেহে গ্রেফতার করে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। তবে প্রাথমিক ভাবে পুলিশের ধারণা, নির্বাচনের শত্রুতার জেরেই খুন করা হয়েছে রেখা দেবীকে।

লক্ষ্য শান্তি রক্ষা

জেলাশাসক এবং এসপি-দের বৈঠক ডাকলেন মমতা

নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা

রাজ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে প্রথম থেকেই 'কড়া হাতে' প্রশাসন চালাতে চান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

তিনি যে 'ঢিলে-ঢালা' ভাবে প্রশাসন চালাবেন না, তা স্পষ্ট হয়েছে শনিবার মুখ্যমন্ত্রীর একটি ঘোষণাতেই। মমতা এ দিন বলেন, "আগামী মঙ্গলবার বিকালে আমি রাজ্যের জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের মহাকরণে বৈঠকে ডেকেছি।" মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ মহলের বক্তব্য, ওই বৈঠকে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার বিষয় তো আছেই, তার সঙ্গে রাজ্যের কোথায় কী পরিস্থিতি, তা তিনি জেলা প্রশাসনের কর্তাদের কাছ থেকে জেনে নিতে চান। এক কথায় বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য— রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার একটা সার্বিক খতিয়ান নিতে চান নতুন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি, রাজ্যের সর্বত্র যে বেআইনি অস্ত্র উদ্ধারের কাজ চলছে, তা আরও দ্রুত করার জন্যও তিনি ওই বৈঠকে পুলিশ ও প্রশাসনকে নির্দেশ দেবেন। কোথায় কত অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে, তার হিসাবও বৈঠকে তিনি পুলিশ সুপারদের কাছ থেকে চাইবেন বলে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন।

কোনও অবস্থাতেই রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা যাতে হাতের বাইরে না চলে যায়, সেই বিষয়ে নতুন মুখ্যমন্ত্রী খুবই 'সতর্ক'। সেই কারণেই তিনি রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে যেমন সপ্তাহে এক বার রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে আলোচনা করবেন, তেমনই প্রতি সপ্তাহে মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব ও রাজ্য পুলিশের ডিজি-র সঙ্গেও বৈঠক করবেন বলে মমতা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

মহাকরণে মমতার প্রবেশের দ্বিতীয় দিনে সরকারি এক সূত্রের খবর, প্রতি ১৫ দিন অন্তর মুখ্যমন্ত্রী মন্ত্রিসভার বৈঠক করবেন। এই বৈঠকের লক্ষ্য, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার পাশাপাশিই রাজ্যের উন্নয়নে যে সমস্ত পরিকল্পনা তাঁর সরকার নিচ্ছে, তার 'সময় মতো' রূপায়ণ নিশ্চিত করাও। কারণ, ভোটের সময়ে যে সমস্ত প্রতিশ্রুতি তাঁরা দিয়েছেন, তা দ্রুত শেষ করতে চান চান মমতা। আগের বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে 'কাজ না করার' যে সমস্ত অভিযোগের তির তাঁরা বিরোধী পক্ষ থেকে ছুড়েছেন, তা আবার নতুন শাসকদের দিকে ফিরে যেন না-আসে, সেই ব্যাপারে মমতা যথেষ্ট 'সচেতন'। সেই সঙ্গে 'নির্দিষ্ট সময়সীমা'র মধ্যে জনমুখী বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ যাতে শেষ হয়, সে বিষয়েও মুখ্যমন্ত্রী গুরুত্ব দিচ্ছেন।

মমতা যখন তাঁর 'দায়িত্ব' সামলানোর চেষ্টা করছেন, তখন জনস্বার্থবাহী কাজে নতুন সরকারের সঙ্গে তাঁরা সহযোগিতা করেই চলবেন বলে ফের জানিয়েছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক তথা বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু। বিধানসভার বিদায়ী স্পিকার হাসিম আব্দুল হালিম এ দিন বিভিন্ন দলের প্রথম সারির নেতাদের ডেকে আলোচনায় বসেছিলেন। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্র (যাঁর বিরোধী দলনেতা হওয়ার কথা) ওই বৈঠকে গিয়েছিলেন। স্পিকারের চিঠি পাওয়া সত্ত্বেও সিপিএমের প্রবীণ বিধায়ক মোস্তাফা বিন কাশেম অবশ্য যেতে পারেননি। বৈঠকে সূর্যবাবুর কাছে পরিষদীয় মন্ত্রী তথা তৃণমূলের পরিষদীয় দলের সহকারী নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায় আর্জি জানান, গঠনমূলক কোনও প্রস্তাব থাকলে তাঁরা যেন অবশ্যই সরকার পক্ষকে জানান। মুখ্যমন্ত্রী তা বিবেচনা করে সহমতের ভিত্তিতেই কাজ করবেন। এই পরিপ্রেক্ষিতেই বিমানবাবু এ দিন বলেন, "আমাদের অবস্থান তো তা-ই। রাজ্যের স্বার্থে, উন্নয়নের স্বার্থে, শ্রমজীবী মানুষ এবং অর্জিত অধিকারে স্বার্থে এই সরকারের সঙ্গে আমরা সহযোগিতা করব। একই সঙ্গে এটাও বলেছি, জনগণের স্বার্থবিরোধী কাজ করলে আমরা বিরোধিতা করব।" প্রায় প্রতি দিনই যে ভাবে সিপিএম এবং তাদের নানা শাখা সংগঠনের কার্যালয় আক্রান্ত হচ্ছে, তা বন্ধ করতে প্রশাসনের সক্রিয় হওয়া উচিত বলেও বিমানবাবু দাবি করেন।

উচ্চশিক্ষায় দলবাজি রুখতে কমিটির পরামর্শ নেবেন ব্রাত্য

নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা

বাম-আমলে শিক্ষার মান নিম্নমুখী হওয়ার প্রধান কারণ যে দলতন্ত্রের নিয়ন্ত্রণ, এ রাজ্যের শিক্ষিত সমাজ দীর্ঘ দিন ধরেই তা বলে আসছে। শনিবার উচ্চশিক্ষা মন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েই ব্রাত্য বসু জানিয়ে দিলেন, শিক্ষাকে দলতন্ত্র-মুক্ত করাই তাঁর প্রথম লক্ষ্য। এর জন্য উপদেষ্টা কমিটি গড়ে তার পরামর্শ নিয়েই এগোবেন বলে তিনি জানিয়েছেন।

তাঁকে যে উচ্চশিক্ষা দফতরের মন্ত্রী করা হচ্ছে, শুক্রবার গভীর রাতে তা জানতে পারেন ব্রাত্যবাবু। শনিবার দুপুর সওয়া একটা নাগাদ মহাকরণ ছুঁয়ে তিনি যান বিকাশ ভবনে উচ্চশিক্ষা দফতরে। সেখানে উচ্চশিক্ষা সচিব, শিক্ষা অধিকর্তার মতো শীর্ষ অফিসারদের সঙ্গে কিছুক্ষণ বৈঠক করেন। নতুন দফতরে আধ ঘণ্টা কাটিয়ে আবার যান মহাকরণে।

দফতরের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে উচ্চশিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। — অর্কপ্রভ ঘোষ

এরই মধ্যে সাংবাদিকদের কাছে তাঁর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানান উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী। তাঁর কথায়, "শিক্ষার মান ও পরিবেশের উন্নতি ঘটানো আমার লক্ষ্য। আগামী এক মাস আমি শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত সকলের সঙ্গে কথা বলব। শিক্ষাকে কী করে দলতন্ত্র মুক্ত করা যায়, কী ভাবে শিক্ষার উন্নতি ঘটানো সম্ভব— সে ব্যাপারে পরামর্শ নেওয়া হবে তাঁদের থেকে। এর জন্য একটি উপদেষ্টা কমিটি গড়া হবে।" তবে উচ্চশিক্ষার নানা বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার জন্য ওই কমিটি এর পরেও থাকবে বলে উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী এ দিন জানান।

উপদেষ্টা কমিটিতে কারা থাকবেন?

প্রযুক্তি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, বিজ্ঞান প্রযুক্তি ও জৈব প্রযুক্তিমন্ত্রী রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়।— নিজস্ব চিত্র

ব্রাত্যবাবু জানান, প্রাথমিক ভাবে সুনন্দ সান্যাল ও অভিরূপ সরকারের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা হয়েছে। ওই দু'জন কমিটির সদস্য হতে রাজি হয়েছেন। এ ছাড়া কল্যাণ সান্যাল, কল্যাণ রুদ্র, ভাস্কর গুপ্ত প্রমুখের সঙ্গেও কথা বলা হবে। তিনি বলেন, "শিক্ষাকে দলতন্ত্র মুক্ত করার কাজ এক দিনেই হয়ে যাবে না। এর জন্য সময় লাগবে। আইনি পদ্ধতিতে কী ভাবে তা করা যায়, এঁদের সঙ্গে সেই বিষয়ে আলোচনা হবে। শিক্ষার খোলনলচে বদলে ফেলতে হবে।" খোলনলচে বদল করার জন্য তিনি যে উচ্চশিক্ষার সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন সংসদ বা কমিশনকে আমূল বদলে ফেলবেন, তা মোটামুটি স্পষ্ট করে দেন ব্রাত্যবাবু।

কিন্তু যাঁদের নিয়ে উপদেষ্টা কমিটি গঠন করবেন বলে তিনি ভেবেছেন, তাঁদের অনেকেই তো তৃণমূলের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। সে ক্ষেত্রে কি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দলীয় নিয়ন্ত্রণমুক্ত করার প্রয়াস নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায় না? এর জবাবে অবশ্য বলা হচ্ছে, "যাদের কথা ভাবা হচ্ছে, তাঁরা কোন দলের সমর্থক সেটা বড় কথা নয়। তার থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে তাঁদের যোগ্যতা।"

ব্রাত্যবাবু একা নন। এ দিন বিকাশ ভবনে যান অন্য শিক্ষা মন্ত্রীরাও। স্কুলশিক্ষা মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, কারিগরি শিক্ষামন্ত্রী রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায় এবং জনশিক্ষা প্রসার দফতরের মন্ত্রী করিম চৌধুরী নিজের নিজের দফতরের সচিব ও পদস্থ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

শনিবার বিকাশ ভবনে স্কুলশিক্ষামন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। — নিজস্ব চিত্র

স্কুলশিক্ষা মন্ত্রী এ দিন তাঁর দফতরের সচিব, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ, প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ, স্কুল সার্ভিস কমিশনের কর্তা, সর্বশিক্ষা অভিযান ও শিক্ষা দফতরের বিভিন্ন আধিকারিকের সঙ্গে বৈঠকের পরে বলেন, "স্কুলশিক্ষার ক্ষেত্রে নানা জটিলতা রয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ, পিটিটিআই, পার্শ্বশিক্ষক, সর্বশিক্ষা অভিযান নিয়ে অনেক সমস্যা আছে। সচিবের কাছে এ ব্যাপারে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। সোমবার তিনি রিপোর্ট দেবেন। বুধবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হবে।" তৃণমূলের নির্বাচনী ইস্তাহারে পাঠ্যক্রম পরিবর্তনের কথা বলা হলেও এখনই সেই কাজে হাত দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন রবীন্দ্রনাথবাবু।

ফের আগ্নেয়াস্ত্র মিলল দুই মেদিনীপুর ও আরামবাগে

নিজস্ব প্রতিবেদন

রাজ্যের নানা এলাকা থেকে অস্ত্র উদ্ধার চলছেই।

শনিবার সকালে পূর্ব মেদিনীপুরের খেজুরির কলাগেছিয়ায় সিপিএমের বন্ধ জোনাল কার্যালয় ও সংলগ্ন পুকুর থেকে উদ্ধার হল ১২২টি কার্তুজ। পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনি থানা এলাকার কয়েকটি জায়গায় মাটি খুঁড়ে আগ্নেয়াস্ত্র এবং কার্তুজ উদ্ধার করেছে পুলিশ। প্রচুর কার্তুজ মিলেছে আরামবাগেও।

বিধানসভা ভোটের আগে পুলিশ-প্রশাসনের উদ্যোগে খেজুরির যে সিপিএম কর্মী-সমর্থকেরা বাড়ি ফিরেছিলেন, তাঁরা কলাগেছিয়ার জোনাল কার্যালয়েই থাকতেন। ফল প্রকাশের পরে আতঙ্কে সকলে গ্রাম ছাড়ায় কার্যালয়টি বন্ধ হয়ে যায়। শনিবার সকালে স্থানীয় একটি ক্লাবের ছেলেরা ওই কার্যালয়ের পুকুরে মাছ ধরতে নেমে পাঁক থেকে একটি নাইলনের ব্যাগ উদ্ধার করেন। যার মধ্যে ৬২টি কার্তুজ ছিল। খবর পেয়ে পুলিশ এসে এলাকায় তল্লাশি চালায়। বন্ধ সিপিএম কার্যালয় থেকে আরও ৬০টি কার্তুজ উদ্ধার করা হয়। দিন তিনেক আগে এই কলাগেছিয়ারই মদন দাস নামে এক সিপিএম কর্মীর বাড়ির সামনের পুকুর থেকে দু'টি একনলা বন্দুক উদ্ধার করে পুলিশ।

আরামবাগের মানিকপাট থেকে উদ্ধার হওয়া অস্ত্র। ছবি: রণজিৎ দাস।

তৃণমূলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য কৃষ্ণেন্দু দাসের অভিযোগ, "সিপিএমের লোকজন সন্ত্রাস ছড়াতে ওই অস্ত্র মজুত করেছিল।" অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে সিপিএম। তাদের দাবি, বন্ধ কার্যালয়ে কার্তুজ রেখে 'নাটক' করছে তৃণমূল। এ দিনই রামনগরের তালগাছাড়ি-১ পঞ্চায়েতের বিশ্বনাথপুরে সিপিএম কর্মী রামপদ ঘোড়ইয়ের বাড়িতে তৃণমূলের লোকেরা আগুন ধরিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। তাঁর ভাই হরিপদবাবু এবং প্রতিবেশী অর্ধেন্দু চন্দের বাড়িতেও তৃণমূলের লোকেরা ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ সিপিএমের। তৃণমূল অভিযোগ মানেনি। গণ্ডগোলের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে চার জনকে আটক করে। এ দিন শালবনির আসনাশুলি, কাশীজোড়া, কেউদি ও সীতারামপুর থেকে মাটি খুঁড়ে ১৭টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ৫৫ রাউণ্ড গুলি উদ্ধার করে পুলিশ।

সকালে আরামবাগের মানিকপাট গ্রাম সংলগ্ন দ্বারকেশ্বর নদীবাঁধের ধার থেকে পশ্চিম জার্মানি লেখা একটি নাইন এম এম পিস্তল এবং তার সাত রাউণ্ড গুলি উদ্ধার করে পুলিশ। পাশেই পড়ে থাকা একটি টিনের বাক্স থেকে মেলে আরও ৩১৩টি নানা ধরনের গুলি। অস্ত্রগুলি সিপিএমের লোকজনই ফেলে গিয়েছে বলে অভিযোগ তৃণমূলের। তারা ওই এলাকায় সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের বাড়ি তল্লাশির দাবি তোলে। অভিযোগ উড়িয়ে পাল্টা তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের বাড়ি তল্লাশির দাবি তোলে সিপিএমও। পুলিশ এসে কয়েকটি জায়গায় তল্লাশি চালিয়েও কিছু পায়নি। গোঘাটেও কাঁটালি ও নকুণ্ডা গ্রামের কয়েক জন সিপিএম কর্মী-সমর্থকের বাড়িতে তল্লাশি চলে। তল্লাশির দাবিতে প্রথমে ওই সব বাড়ি ঘেরাও করেছিলেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরা। পুলিশ এবং র‍্যাফ গিয়ে লাঠি চালিয়ে তাঁদের সরিয়ে দেন। তল্লাশিতে কিছু মেলেনি বলে পুলিশ জানিয়েছে।

অন্য দিকে, এ দিন দুপুরে বাঁকুড়ার পাত্রসায়রের বাঁশদহ গ্রাম লাগোয়া একটি পুকুর থেকে ২৫টি বোমা উদ্ধার করে পুলিশ। জেলা পুলিশের এক পদস্থ কর্তা জানান, উদ্ধার হওয়া বোমাগুলি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। কে বা কারা ওই বোমাগুলি রেখেছিল তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

এ দিন মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরে কংগ্রেসের বিজয়মিছিল থেকে সিটুর অফিসে হামলা করা হয়েছে বলে অভিযোগ সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্যের। অভিযোগ অস্বীকার করেছে কংগ্রেস।

'প্রভাবশালী' এসআইদের তালিকা চাইল মহাকরণ

কিশোর সাহা • কলকাতা

কই জেলায় দীর্ঘদিন ধরে থাকার সুবাদে 'প্রভাবশালী' হয়ে ওঠা সাব ইনস্পেক্টরদের ব্যাপারে বিশদে তথ্য সংগ্রহে নামল রাজ্য পুলিশের সদর দফতর। মহাকরণ সূত্রের খবর, সম্প্রতি রাজ্য পুলিশের ডিজির দফতর থেকে সব জেলার পুলিশ সুপারকে নির্দেশ পাঠিয়ে তাঁদের জেলায় কর্মরত সাব ইনস্পেক্টরদের ব্যাপারে পূর্ণাঙ্গ তথ্য চাওয়া হয়েছে। বিশেষত, কোন কোন সাব ইনস্পেক্টর সাত বছর কিংবা তারও বেশি সময় ধরে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে একই জেলায় রয়ে গিয়েছেন, তাঁদের তালিকা পৃথক ভাবে পাঠানোর নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।

আরও তাৎপর্যপূর্ণ হল, ওই নির্দেশে সাব ইনস্পেক্টরদের স্থায়ী ঠিকানাও জানতে চাওয়া হয়েছে। মহাকরণ সূত্রের খবর, আগামী সপ্তাহের মধ্যেই ওই তথ্য রাজ্য পুলিশের সদর দফতরে পাঠানোর প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করার জন্য এসপিদের বলা হয়েছে।

রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের একটি সূত্রে জানানো হয়েছে, এসপি, এএসপি, ডিএসপি ও ইনস্পেক্টরদের ব্যাপারে পূর্ণাঙ্গ তথ্য নির্বাচন প্রক্রিয়ার সময়েই সংগ্রহ করা হয়েছে। কিন্তু থানা পর্যায়ের অফিসার অর্থাৎ এসআইদের বিষয়ে তথ্য না থাকায় ভোট প্রক্রিয়ার সময়ে নানা অভিযোগ শুনে অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে পুলিশ কর্তাদের। কারণ, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া থেকে শুরু করে কোচবিহার, দার্জিলিং কিংবা মালদহ, প্রায় সর্বত্রই একাধিক এসআই টানা ৭ বছর ধরে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে থাকার সুবাদে 'অত্যন্ত প্রভাবশালী' হয়ে উঠেছেন বলে অভিযোগ পৌঁছেছে মহাকরণে। অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতাদের একাংশের সঙ্গে 'ঘনিষ্ঠতা'র অভিযোগও রয়েছে। তা জানার পরেই সম্প্রতি এসআই-দের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেয় স্বরাষ্ট্র দফতর। তার পরেই সব জেলার এসপিকে নির্দেশ পাঠিয়ে দ্রুত তথ্য সংগ্রহ করতে বলা হয়।

পুলিশ সূত্রের খবর, ওই নির্দেশ পৌঁছনোর পরে পুলিশ কর্মচারীদের দু'টি সংগঠনই সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বাম মনোভাবাপন্ন সংগঠনের নেতাদের অনেকেরই আশঙ্কা, তথ্য পৌঁছনোর পরে বাছাই এসআইদের বদলি করে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হবে। সে ক্ষেত্রে অযথা কাউকে বদলি করা হলে কী করণীয়, তা নিয়ে ওই সংগঠনে আলোচনা শুরু হয়েছে।

পক্ষান্তরে, ডান মনোভাবাপন্ন পুলিশ সংগঠনের পদাধিকারীদের কয়েক জনের মতে, রাজনৈতিক নেতাদের একাংশের প্রভাবে নানা জেলায় বেশ কয়েকজন এসআই দীর্ঘদিন ধরে রয়েছেন। পুলিশ অ্যাসোসিয়েশনের এক কর্তার কথায়, "ভোটের সময়ে থানা থেকে সরিয়ে ডিআইবি, জিআরপি কিংবা ডিইবি-তে বদলি করা হয়েছে। ভোটের পরে তাঁদের ফেরানোর ঘটনাও কম নেই। এ বার তথ্যপঞ্জী মহাকরণে পৌঁছলে আশা করি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"

রাজ্য পুলিশের কয়েক জন শীর্ষ কর্তা স্বীকার করেছেন, একাধিক এসআইদের কোন থানায় রাখা হবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের একাংশের কাছ থেকে সুপারিশ আসার ঘটনা সাম্প্রতিক অতীতে ঘটেছে। এমনকী, ভোটগণনার পরেও নেতাদের কয়েক জন 'পছন্দসই' এসআইকে নির্দিষ্ট জায়গায় বদলির জন্য সুপারিশ করেছেন বলেও এক শীর্ষ কর্তা জানান।

পাশাপাশি, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শপথগ্রহণের পরেই ঘোষণা করেছেন, তিনি পুলিশকে নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করতে দিতে চান। সে কথা মাথায় রেখে পুলিশের শীর্ষ কর্তারাও কোমর বেঁধে আসরে নেমে পড়েছেন।

মাধ্যমিকের ফল ২৭শে

নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা

লতি বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল বেরোবে আগামী শুক্রবার, ২৭ মে। ১০ লক্ষেরও বেশি ছাত্রছাত্রী এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। পরীক্ষা শুরু হয়েছিল ২৩ ফেব্রুয়ারি। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি অঞ্জন সেনগুপ্ত শনিবার বলেন, "২৭ মে বেলা দশটায় সব স্কুলের প্রতিনিধিদের হাতে মার্কশিট তুলে দেওয়া হবে। ওই দিনই ছাত্রছাত্রীদের মার্কশিট দিতে অনুরোধ করা হয়েছে স্কুলগুলিকে।"

ওই দিন বেলা ১১টার পরে ওয়েবসাইট, এসএমএস এবং টেলিফোনে পরীক্ষার্থীরা ফল জানতে পারবে বলে অঞ্জনবাবু জানিয়েছেন। যে সব ওয়েবসাইটে ফল জানা যাবে, সেগুলি হল: www.wbbse.orghttp://wbresults.nic.in,http://results.banglarmukh.gov.inwww.calcuttatelephones.comwww.rediff.com/exams,www.exametc.comwww.results.sify.comwww.results.classontheweb.com,www.indiaresults.comwww.examresults.netwww.wbeducation.net,www.results.wbeducation.netwww.clickcollegestreet.comwww.schools9.com,www.educationGateway.co.in। এর মধ্যে www.exametc.com-এ রোল নম্বর এবং মোবাইল নম্বর আগাম নথিবদ্ধ করে রাখলে ফলপ্রকাশের পরে এসএমএস মারফত ফল জানতে পারবে পরীক্ষার্থীরা। এসএমএস মারফত ফল জানার জন্য -এর পরে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে পাঠাতে হবে। যে সব নম্বরে এসএমএস করে ফল জানা যাবে, সেগুলি হল: ৫৭৩৩৩,৫৪৫৪৫, ৫৪২৪২, ৫৬৭৬৭৯৯৯, ৫৮৮৮৮, ৫৬২৬৩, ৫৬৫০৫ (বিএসএনএল), ৫৫৪৫৬ (আইডিয়া), ৫৪৩২১২২২২ (এয়ারটেল), ৫৬৫০৬ (রিলায়্যান্স), ৫৬৭৩০, (ভোডাফোন)। টেলিফোনে ফল জানা যাবে যে সব নম্বরে, সেগুলি: ৫০৫১০১০৯৬, ৫৮৮৮৮, ১২৫৫৫৯৬, ১২৫৫৫৬০ (বিএসএনএল), ৫৫৪৫৬৭৮ (আইডিয়া), ৫৪৩২১২২২২ (এয়ারটেল), ৫৬৫৬৬ (রিলায়্যান্স), ৫৬৭৩১ (ভোডাফোন), ৫৪৩২১২৩৪ (টাটা জিএসএম), ১২৯৬৬০ (টাটা)।


আজ জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা

এ বছরের জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষা হবে আজ, রবিবার। পরীক্ষা দেবেন প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে ভিন্‌ রাজ্যের পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৪৬ হাজারের কাছাকাছি। আজ পরীক্ষা শুরু হবে সকাল সাড়ে ন'টায়। জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডের চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ দত্ত জানিয়েছেন, সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত অঙ্ক, সাড়ে ১২টা থেকে আড়াইটে পর্যন্ত পদার্থবিদ্যা ও রসায়ন এবং সাড়ে ৩টে থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত প্রাণিবিদ্যার পরীক্ষা হবে। তিনি বলেন, "এ বছর ৩১১টি কেন্দ্রে পরীক্ষা হবে। এর মধ্যে তিনটি কেন্দ্র ত্রিপুরায়, বাকিগুলি এ রাজ্যে।" পরীক্ষা সংক্রান্ত কোনও সমস্যার জন্য বোর্ডের যে কন্ট্রোল রুমগুলিতে যোগাযোগ করা যাবে, সেগুলি হল: মেদিনীপুর- ৯৮৭৪২৭৭৭০০, দুর্গাপুর- ৯৮৭৪৩৭৭৭০০, উত্তরবঙ্গ- ৯৮৭৪৫৭৭৭০০, কল্যাণী- ৯৮৭৪৬৭৭৭০০, হুগলি- ৯৪৩৩৫১২৫০০ এবং কলকাতা- ২৩৬৭১১৫৯/১২৬৭১১৯৮।

অগ্রাধিকার চাই না, রাস্তায় নেমে বললেন ট্রাফিক পুলিশকে

আচমকা রাজপথে মুখ্যমন্ত্রী, অবাক নাগরিক

ঋজু বসু

ম নাগরিক বা প্রশাসনের একাংশকে কিছু বুঝতে না-দিয়ে মর্জিমাফিক রাজপথে ঘুরছেন এক মুখ্যমন্ত্রী। কোথায় যাবেন, কোথায় থামবেন— কারও কাছেই নির্দিষ্ট খবর নেই। এমন ঘটনা শহর কলকাতায় আদৌ কখনও ঘটেছে! শুধু শহর কলকাতায় কেন? কখনও ঘটেছে এ রাজ্যে? এ দেশে?

লোকগাথা বা রাজা-বাদশাদের ইতিহাসে এমন নমুনা কিছু কিছু মিলবে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের ইতিহাসে এ দৃশ্য সত্যিই দুর্লভ! শুক্রবার সন্ধ্যায় তেমনই ঘটনা ঘটল। রাজ্যের নতুন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর দিনই অনেকটা বাগদাদের বাদশা হারুন-অল-রশিদের ঢঙে আমজনতা বা প্রশাসনকে কিছু বুঝতে না-দিয়ে শহর ঘুরতে রাজপথে নামলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সহস্র এক আরব্য রজনীর কাল্পনিক সুলতানের মতো এ ক্ষেত্রে অবশ্য কোনও নাটকীয় ছদ্মবেশের ধার ধারেননি নতুন মুখ্যমন্ত্রী। তবে সামনে হুটার-বাজানো পাইলট-গাড়ি বা লালবাতি-বিহীন আপাত-সাধারণ কনভয় বা সাদামাঠা ছোট একটা কালো গাড়ির আরোহীকে আচমকা দেখে রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান হিসেবে চিনবে কার সাধ্য! আর-পাঁচজন সাধারণ নাগরিকের মতো মুখ্যমন্ত্রীও অফিস-টাইমের ট্র্যাফিক সিগন্যালে আটকে চিরাচরিত শহুরে যানজটের স্বাদ পেলেন। রাজপথে মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতির খবর জানতে পেরে সংবাদমাধ্যমের মরিয়া দৌড়ঝাঁপটুকুু বাদ দিলে সান্ধ্য শহরের ব্যস্ত নাগরিকেরা কেউ শহরে মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিটাই কার্যত টের পেলেন না! গত ৩৪ বছরের বাম জমানায় কোনও মুখ্যমন্ত্রীকে এ ভাবে শহরে ঘুরতে দেখা তার দূর অস্ত, তার আগেও রাজ্যের কোনও মুখ্যমন্ত্রী এ ভাবে পথে নেমেছেন বলে লালবাজারের পোড়খাওয়া কর্তারাও কিছুতেই মনে করতে পারছেন না।

ফোর্ট উইলিয়ামের সামনে ট্রাফিক সিগন্যালে আটকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার সন্ধ্যায়। —সুমন বল্লভ

সন্ধ্যা ছ'টা নাগাদ মহাকরণ থেকে বেরিয়ে ঘণ্টা দেড়েক ধরে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে মুখ্যমন্ত্রীর এই সফর নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নিয়েই। মন্ত্রিসভার সহকর্মী রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিম ও কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে সঙ্গে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বেশ কয়েকটি জায়গায় ঘুরে কলকাতার রাস্তার সম্প্রসারণ ও শহরে সৌন্দর্যায়নের একটি রূপরেখা ঠিক করতে চেয়েছিলেন। সরেজমিনে দেখতে চেয়েছিলেন, কোথায় কী করা যেতে পারে। সে কাজে তাঁর সঙ্গে থাকার কথা ছিল পুর-নগরোন্নয়ন দফতরের পদস্থ অফিসারদেরও। কিন্তু হঠাৎ-বৃষ্টিতে তাঁদের ছাড় দেন মুখ্যমন্ত্রী। যেমন ছাড় দিতে চেয়েছিলেন সাধারণ নাগরিকদের। যাতে তাঁর হঠাৎ-সফরের ফলে পথচারীদের যাতে সামান্যতম ভোগান্তি না-হয়। তাঁর বক্তব্য খুব স্পষ্ট, "পথচলতি মানুষের বিরক্তি উৎপাদন হয়, এমনকিছু কখনও করিনি। করবও না।" রাজ্য সরকারের দেওয়া বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার মমতা কখনওই করেন না। এখনও করছেন না। বস্তুত, তাঁর মন্ত্রিসভার সহকর্মীরাও যাতে রাস্তায় হুটার বাজিয়ে চলাফেরা না-করেন, সেই মর্মেও নির্দেশ দিয়ে রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু তাঁর গাড়ির পিছনে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীদের তো ছুটতেই হচ্ছে! তিনি যে, হাজার হোক, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী!

বস্তুত, এ দিন সকালেই কালীঘাটের বাড়ি থেকে মহাকরণে আসার পথে রেসর্কোসের কাছে গাড়ি থেকে নেমে কতর্ব্যরত পুলিশকর্মীদের ঈষৎ বকুনি দিয়ে তাঁর যাতায়াতের সময়ে কী চান বা চান না, তা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন নতুন মুখ্যমন্ত্রী। পুরনো জমানার অভ্যাসমাফিক মুখ্যমন্ত্রীর যাতায়াত মসৃণ করতে এ দিনও রাস্তার দু'টি ধারেই যান চলাচল থামিয়ে দিয়েছিল ট্র্যাফিক পুলিশ। যা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর সময়ে হত বেশ কিছুক্ষণ ধরে। সদ্য-প্রাক্তন বুদ্ধবাবুর আমলে তুলনায় খানিকটা কম সময়। কিন্তু মমতা সে পথে হাঁটবেন কেন?

সিগন্যাল পেরিয়ে রেসকোর্সের কাছে এসে মমতা খেয়াল করেন, রাস্তার অন্য প্রান্তে লাল আলোর নিষেধে সব গাড়ি দাঁড়িয়ে, অথচ অন্য দিকে ট্র্যাফিক সিগন্যাল লাল হয়ে থাকলেও তা লঙ্ঘন করে তাঁর গাড়িকে পার করানো হচ্ছে। তৎক্ষণাৎ গাড়ি থামিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী। পুলিশকর্মীদের ডেকে বলেন, রাস্তায় চলাচল করতে গিয়ে এ ধরনের 'অগ্রাধিকার' পাওয়া তাঁর ঘোর অপছন্দ। অন্য নাগরিকদের মতোই তিনিও এক সাধারণ নাগরিক। তিনিও ট্র্যাফিক আইনের আওতাতেই পড়েন।

এ দেশে মুখ্যমন্ত্রী বা সমমর্যাদার নেতা-নেত্রীদের জন্য রাজপথে এমন 'সাম্যবাদ' নিয়ে অবশ্য পুলিশের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মধ্যে কিছুটা সংশয় রয়েছে। কিন্তু পশ্চিমী দেশগুলিতে ব্যক্তিগত, সামাজিক বা দলীয় কাজে যাওয়ার জন্য জন প্রতিনিধিরা নীতিগত ভাবে কখনওই সরকারি গাড়ি বা নিরাপত্তা ব্যবহার করেন না। এ দেশে পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীই আপাতত সেই বিষয়টিতে কঠোর। বরং এক ধাপ এগিয়ে সরকারি কাজেও সরকারি গাড়ি ব্যবহার না-করে মমতা তাঁর নিজস্ব কালো স্যান্ট্রোর ব্যবহার অটুট রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এখন দেখার, তাঁর মন্ত্রিসভার সহকর্মীদের মধ্যেও (যাঁরা ব্যক্তিগত, সামাজিক বা দলীয় কাজে সরকারি গাড়ি বা নিরাপত্তারক্ষী ব্যবহারকে সামাজিক উত্তরণের সোপান হিসেবে ধরে নেন) তিনি তাঁর এই মনোভাব ছড়িয়ে দিতে পারেন কিনা। অথবা এ নিয়ে কোনও নির্দেশ জারি করেন কিনা।

বস্তুত, রাজপথের নেত্রী থেকে প্রশাসকের ভূমিকায় উত্তীর্ণ হলেও মমতা তাঁর মূলমন্ত্র— আমি তোমাদের লোক, আচরণ করেই যেতে চান। তাই মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েও পায়ে হেঁটে রাজভবন থেকে মহাকরণে যান। কোনওমতেই 'জন-বিচ্ছিন্ন' হতে চান না 'জননেত্রী'। মুখ্যমন্ত্রী হলেও নয়। তাই পারলে মহাকরণের ভিআইপি লিফটও ব্যবহার করেন না। তাঁর নিরাপত্তা নিয়ে পুলিশের উদ্বেগ বাড়তে পারে। কিন্তু আমজনতা তো তাঁকে দু'হাত তুলে আশীর্বাদ করবেই! যারা ভিভিআইপি কনভয়ের চোটে রাস্তায় আটক থাকাটাকেই নিয়তি বলে মেনে নিয়েছে। যারা এদিন বৃষ্টির সন্ধ্যায় হাত তুলে থামিয়ে রাস্তা পার হয়ে গিয়ে খেয়াল করেছে, আরে! যে গাড়িকে থামানো হল, তাতে বসে স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী! যিনি হাত নেড়ে আবার সাবধানে রাস্তা পেরোতে বলছেন!

মহাকরণ থেকে রেড রোড হয়ে পার্ক ষ্ট্রিটের দিকে ঘুরে কোনও আগাম ঘোষণা ছাড়াই বিড়লা তারামণ্ডলের দিকে চলে যান মমতা। ভিক্টোরিয়ার মাঠের দিকে ঘুরে গিয়ে ময়দানে চক্কর কাটার ভঙ্গিতেই ফের পার্ক ষ্ট্রিটের দিকে এগিয়ে সটান পার্কসার্কাস হয়ে ইস্টার্ন বাইপাস ধরেন। পূর্ব কলকাতার কাদাপাড়ার দিক অবধি ঘুরে পার্ক সার্কাস, আলিপুর হয়ে হরিশ চ্যাটার্জি ষ্ট্রিটের বাড়িতে ফিরেছেন। সেই ঝটিকা-সফরে মমতা কখনও পিছনের আসনে-বসা ববি-শোভনকে নির্দেশ দিয়েছেন, "নোট নাও!" কখনও ময়দানের ধারে ভাঙাচোরা রেলিং সারাতে বলেছেন। কখনও চার নম্বর সেতু থেকে নেমে মিলনমেলা প্রাঙ্গণ অবধি রাস্তার সম্প্রসারণ ও ফুটপাথ তৈরি নিয়ে পরিকল্পনা করেছেন।

তবে বেনজির ওই ঘটনার ছবি তুলতে সংবাদমাধ্যমের উৎসাহ সম্ভবত মমতাকেও আংশিক বিব্রত করেছে। চিত্রসাংবাদিকদের বার বার ছবি তুলতে নিষেধও করেছেন তিনি। রাজপথে তাঁর উপস্থিতি টের পেয়ে জনতা ভিড় করলে যে তাঁর হঠাৎ-সফরের উদ্দেশ্যটাই মার খেতে পারে, এমন আশঙ্কা দানা বাঁধছে মুখ্যমন্ত্রীর মনেও। সে ক্ষেত্রে হয়ত হারুন অল রশিদই হতে হবে মমতাকে। মধ্যরাতে প্রায় ছদ্ম-পরিচয়ে, সাধারণ গাড়িতে সওয়ার হয়ে বেরিয়ে পড়তে হবে সরেজমিনে দেখতে— কেমন চলছে তাঁর রাজ্যপাট।

উত্তর বাম-চরিত

জগদীশ সত্যেন প্রফুল্ল
অমর্ত্য... আরএখন?
দীর্ঘদিন ধরে কর্কটরোগাক্রান্ত
প্রেসিডেন্সি। তবে নিদান আছে।

সমস্যা

ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানের মান ক্রমশই নিম্নমুখী। বড় মাপের শিক্ষকেরা অনেকেই ছেড়ে গিয়েছেন (উদাহরণ, সুকান্ত চৌধুরী)। ছাত্রদের স্রোতও বহির্মুখী। পশ্চিমবঙ্গের মেধাবী ছাত্ররা এখন বিদেশে যায়, না হলে অন্তত দিল্লি। যারা নানা কারণে যেতে পারে না, তারা আরও কয়েকটি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রেসিডেন্সিতেও ভর্তির পরীক্ষা দেয়। প্রেসিডেন্সি কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের জন্য যে আইন তৈরি হয়েছে, সেটাও রাজ্যেরই অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের নকল। তার সাহায্য নিয়ে উৎকর্ষ বৃদ্ধি খুবই কঠিন।

সমাধান

শুরু করা দরকার বাতি জ্বালানোর আগে সলতে পাকানো থেকে। প্রেসিডেন্সি সরকারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু সত্যিকারের উৎকর্ষকেন্দ্র হিসাবে প্রেসিডেন্সিকে গড়ে তুলতে গেলে সরকারের আপাতত একটিই কাজ। অতি-বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের পরামর্শ নিয়ে প্রেসিডেন্সির জন্য একটি উপদেষ্টা গোষ্ঠী

(মেন্টর গ্রুপ) গড়া। নালন্দার ক্ষেত্রে যেমন হয়েছে। সেখানে অমর্ত্য সেন, সুগত বসুর মতো বিশিষ্ট বাঙালিরা রয়েছেন। প্রেসিডেন্সির ক্ষেত্রেই বা তেমন করা যাবে না কেন? বিহারে যদি হতে পারে, তবে বাংলাতেই বা হবে না কেন?

প্রেসিডেন্সির এক বিশিষ্ট প্রাক্তনী, হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক সুগত বসুর কথায়, "দুনিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলির পরিচালন সমিতিতে সেখানকার বিশিষ্ট প্রাক্তনীদের রাখা হয়। এ ক্ষেত্রেও সেই দৃষ্টান্ত অনুসরণ করা উচিত।" প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান আইনে প্রাক্তনীদেরও আসতে হবে নির্বাচনের মাধ্যমে। অথচ, আমেরিকা থেকে কিউবা— পৃথিবীর কোথাও এমন হয় না। সেখানে বিশিষ্ট প্রাক্তনীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। প্রেসিডেন্সির ক্ষেত্রেও সেই বন্দোবস্ত রাখতে হবে। অমর্ত্য সেন, প্রণব বর্ধনরা নির্বাচিত হয়ে আসবেন না, তাঁদের সসম্মান আমন্ত্রণ জানিয়ে নিয়ে আসতে হবে।

একদা


সত্যেন বসু

অমর্ত্য সেন

অশীন দাশগুপ্ত

সুগত বসু

আজ

পরের পর্বে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ শিক্ষক নিয়োগ। এই ক্ষেত্রেও একটু নতুন পথে হাঁটা দরকার। প্রতিটি বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ করার জন্য একটি করে সার্চ কমিটি গড়া প্রয়োজন। প্রেসিডেন্সির জন্য এখনই কিছু 'রোল মডেল' চাই। ১৮১৭ সালে প্রতিষ্ঠার সময় থেকে শুরু করে প্রেসিডেন্সির দীর্ঘ যাত্রায় কোনও কালেই রোল মডেল-এর অভাব ঘটেনি। ব্যতিক্রম সাম্প্রতিক অতীত। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে সার্চ কমিটি গড়ার চল রয়েছে। কিন্তু সেই সার্চ কমিটি গড়ে সরকার। এ ক্ষেত্রে তা করলে হবে না। পরিচালন সমিতিই সার্চ কমিটি গড়বে।

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক তথা জাতীয় গ্রন্থাগারের ডিরেক্টর স্বপন চক্রবর্তীর মতো কেউ কেউ চান, বিভিন্ন ক্ষেত্রের কৃতীদের নিয়ে প্রেসিডেন্সির জন্য একটি নাগরিক গোষ্ঠী গড়া হোক। সরকারি হস্তক্ষেপই হোক বা রাজনীতির সরাসরি আঁচ— ওই গোষ্ঠী মাঝে থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে বাঁচাতে পারবে। তবে স্বাধীন ভাবে কাজ করতে দিলে বিশিষ্টদের নিয়ে গড়া পরিচালন সমিতিও এই কাজটা করতে পারে।

আর্থিক সহায়তা বা পরিকাঠামো গড়ায় সহায়তা দেওয়া ছাড়া সরকারের অন্য কোনও ভূমিকা থাকবে না। তবে পাশাপাশি, সমাজ থেকেও আর্থিক সহায়তা নেওয়ার ব্যবস্থা থাকা দরকার। আবার টাকা কেউ দিতে চাইলেই হবে না। কোন ব্যক্তি বা কোন সংস্থার কাছ থেকে টাকা নেওয়া হবে, তা স্থির করার জন্য দায়িত্বশীল কমিটি থাকবে। প্রেসিডেন্সির গবেষণাগার, গ্রন্থাগার— একেবারে এই সময়ের মতো করে ফের গড়ে তোলা দরকার। বেসরকারি ক্ষেত্র থেকে আর্থিক সহায়তা পেলে এই কাজ অনেক সহজ হবে।

প্রেসিডেন্সির পরিবর্তনের আর একটি মডেলও ভাবা যেতে পারে। কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দরবার করে একে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করা যেতে পারে। বিজ্ঞানী বিকাশ সিংহের মতো ওই কলেজের কোনও কোনও প্রাক্তনীও তেমনই চাইছেন। রাজ্যে একমাত্র কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বভারতী। যাকে উৎকর্ষকেন্দ্র হিসাবে মেনে নিতে শিক্ষাজগতে সঙ্গত কারণেই প্রবল আপত্তি থাকবে। তাই দৃষ্টান্ত হিসাবে বরং জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ)-কে সামনে রাখা যাক। পরিকাঠামো, পঠনপাঠনের সুনামের দিক থেকে রাজ্যের কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ই জেএনইউ-এর সমকক্ষ নয়। তাই ওই মডেলকে সামনে রেখে যাত্রা শুরু করতে পারে নয়া প্রেসিডেন্সি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সম-মর্যাদাসম্পন্ন ইণ্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট (আইএসআই)-এর মতো কেন্দ্রীয় সরকারি প্রতিষ্ঠানকেও নজির হিসাবে সামনে রাখা যায়।

আবার বিশ্ববিদ্যালয় বানাতে গিয়ে প্রেসিডেন্সি কলেজের অবলুপ্তির প্রয়োজন ছিল না। হার্ভার্ডে একই সঙ্গে রয়েছে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়। স্নাতক স্তরে ছাত্রেরা পড়েন হার্ভার্ড কলেজে, আর স্নাতকোত্তরে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে। প্রেসিডেন্সি যদি হার্ভার্ডের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে, ক্ষতি কী?

প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে নিশ্চিত ভাবেই এ সবের সংস্থান নেই। কিন্তু উৎকর্ষকে অগ্রাধিকার দেওয়া যদি লক্ষ্য হয়, তা হলে আইন বদলেও ফেলা যায়। ভোটদাতারা যেমন সরকারকে ফেলে দেন, তেমনই প্রেসিডেন্সির আইনটাও নির্দ্বিধায় ফেলে দেওয়া উচিত। আইনের জন্য প্রেসিডেন্সি নয়, আইন প্রেসিডেন্সির জন্য, উৎকর্ষের জন্য।

'লণ্ডন' গড়তে পুরসভাই অস্ত্র মুখ্যমন্ত্রীর

নিজস্ব সংবাদদাতা

লকাতাকে 'লণ্ডন' করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তা নিয়ে বিরোধীরা ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করতেও ছাড়েনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পরের দিনই বিদ্রুপের জবাব দেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করে দিলেন তিনি। পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে মহাকরণে বৈঠকে ডেকে ওই লক্ষ্যে তৎপর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন মমতা।

'পিংক সিটি' জয়পুরের মতো কলকাতার বাড়িগুলিরও কোনও অভিন্ন রং করা যায় কি না, সে কথাও ভাবতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। এ ক্ষেত্রে শিল্পীদের পরামর্শ নেবে রাজ্য সরকার। একই সঙ্গে কলকাতার পুর পরিষেবা ও নাগরিক স্বাচ্ছন্দ্য বাড়াতে রাজ্য সরকারের তরফে যা যা করণীয়, তা অবিলম্বে করতে শনিবার এক গুচ্ছ সিদ্ধান্তও ঘোষণা করা হয়েছে।

সেগুলি হল—

 
কলকাতা পুরসভা এলাকায় জল, আলো, রাস্তা, নিকাশি ব্যবস্থার মতো সব ধরনের পুর পরিষেবার কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ রাজ্য সরকারি বিভিন্ন সংস্থার হাত থেকে নিয়ে পুরোপুরি কলকাতা পুরসভার হাতে তুলে দেবে রাজ্য সরকার।
 গার্ডেনরিচ জলাধার প্রকল্প এ দিনই তুলে দেওয়া হয়েছে কলকাতা পুরসভার হাতে। গার্ডেনরিচ জলাধার থেকে কলকাতা পুরসভা এর পর বজবজ, মহেশতলা ও পূজালি পুরসভাকেও জল সরবরাহ করবে।
 'কেআইটি' (কলকাতা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট)-র ভারও তুলে দেওয়া হচ্ছে কলকাতা পুরসভার হাতে।
 কলকাতা পুরসভার সংলগ্ন এলাকাগুলির পরিষেবা ও পরিকাঠামোকেও উন্নত করার জন্য সল্টলেকের নবদিগন্ত এবং জোকা ১ ও ২ পঞ্চায়েতকে কলকাতা পুরসভার সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বিধানসভায় এই ব্যাপারে বিল আনা হবে (তবে কলকাতা পুরসভায় বিধাননগরের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে এখনই কিছু বলতে রাজি নন নগরোন্নয়নমন্ত্রী)।
 গোটা রাজ্যের সঙ্গে কলকাতা শহরেও চালু হচ্ছে 'অভিন্ন হোর্ডিং নীতি'। সে জন্য হোর্ডিং সংস্থাগুলির সঙ্গে আলোচনা করা হবে। রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্ত— হোর্ডিং যেখানে লাগানো হবে, সেখানে হোর্ডিং সংস্থাকে নিজেদের খরচে ফুটপাথ ও রাস্তার আলোর দেখভাল করতে হবে।

স্বপ্নের সিঁড়ি

 নিজেদের এলাকায় পুর পরিষেবার সার্বিক কর্তৃত্ব কলকাতা পুরসভাকে 
 সল্টলেকের নবদিগন্ত, জোকা ১ ও ২ পঞ্চায়েত মিশছে কলকাতা পুরসভায় 
 গার্ডেনরিচ জলাধার প্রকল্প কলকাতা পুরসভার হাতে 
 পুরসভার নিয়ন্ত্রণে যাচ্ছে কলকাতা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্টও
 শহরের সব বাড়ির এক রং করার চিন্তা 
 হোর্ডিং লাগালে ওই সংস্থাকে দেখতে হবে এলাকার আলো, ফুটপাথ

দমদম, দক্ষিণ দমদম এবং সংলগ্ন আরও চারটি পুরসভার জল সরবরাহ ও অন্যান্য নাগরিক পরিষেবার উন্নতির জন্য সেগুলির চেয়ারম্যানদের নিয়ে কাল, সোমবার টাউন হলে বৈঠকে বসবেন কেন্দ্রীয় নগরোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী সৌগত রায় এবং রাজ্যের পুরমন্ত্রী। পলতার জল নিয়ে এই সব এলাকায় ওই পুরসভাগুলির সঙ্গে কলকাতা পুরসভার সঙ্গে দীর্ঘদিনের বিরোধ। সেটা মেটাতেই এই বৈঠক বলে পুর দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর নগরোন্নয়নমন্ত্রী বলেন, কলকাতাকে লণ্ডনের মতো করার জন্য মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে অবিলম্বে একটি নীতি তৈরি করতে বলেছেন। এ ব্যাপারে 'রাইটস' (রেল ইণ্ডিয়া টেকনিক্যাল অ্যাণ্ড ইকনমিক সার্ভিসেস) সংস্থা ইতিমধ্যে সমীক্ষার কাজে হাত দিয়েছে। তাদের সমীক্ষা রিপোর্ট এক মাসের মধ্যে জমা পড়বে। তার পর সেই রিপোর্ট মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পেশ করা হবে। টেমস নদীর দু'ধারে যেমন লণ্ডন শহরকে সাজিয়ে তোলা হয়েছে, রাইটস-এর সুপারিশ মতো হুগলি নদীর দুই তীরকেও সেই ভাবে সাজিয়ে তোলা হবে। ঐতিহ্যপূর্ণ ভবনগুলির যথাযথ সংরক্ষণ করা হবে। জমির উপযুক্ত ব্যবহার কী ভাবে করা যায়, সেই ব্যাপারেও কার্যকর পদক্ষেপ করা হবে।

নগরোন্নয়নমন্ত্রীর কথায়, গার্ডেনরিচ জল সরবরাহ প্রকল্পটির নিয়ন্ত্রণ ছিল রাজ্য সরকারের নগরোন্নয়ন দফতরের 'কেএমডব্লিউএসএ'-র অধীনে। আর সেখান থেকে জল নিয়ে তা সরবরাহ করত কলকাতা পুরসভা। কিন্তু রাজ্য সরকার রক্ষণাবেক্ষণের কাজ ঠিক মতো না করায় গঙ্গা থেকে পর্যাপ্ত জল তুলে গার্ডেনরিচে তা পরিশোধনের কাজে ব্যাঘাত ঘটছিল। তার ফলে পুরসভা বিপাকে পড়ছিল। নগরোন্নয়নমন্ত্রীর ঘরে ছিলেন কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়। তিনি বলেন, তাঁরা পুরসভায় ক্ষমতায় এসে গার্ডেনরিচ প্রকল্পের মেরামতের জন্য পাঁচ কোটি টাকা দিলেও রাজ্য সরকার সেই কাজ না করে টাকাটা জলের বিলের বকেয়া বাবদ কেটে নিয়েছে। সেই কারণে গার্ডেনরিচ জল প্রকল্পের সমস্ত কর্মীকে তাঁদের চাকরির সব সুবিধা বজায় রেখে কলকাতা পুরসভার অধীনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

কেআইটি-কে কলকাতা পুরসভার হাতে তুলে দেওয়ার কারণ, ওই সংস্থা থেকে 'অ্যালাইনমেন্ট'-এর ব্যাপারে ছাড়পত্র না মিললে কেআইটি-র অধীন রাস্তার পাশে বাড়ি তৈরির নকশা মাসের পর মাস আটকে থাকত। ওই জটিলতা দূর করতে সেটিকেও কলকাতা পুরসভার অধীনে একই ছাতার তলায় নিয়ে আসা হল।

শহরের জল, রাস্তার মতো সমস্ত পরিষেবার নিয়ন্ত্রণ কলকাতা পুরসভার হাতে তুলে দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে ফিরহাদ হাকিম বলেন, এখন কোনও রাস্তা পুরসভার, কোনও রাস্তা পূর্ত দফতরের, কোনও রাস্তার মালিকানা কেএমডিএ-র হওয়ায় কোনওটি খারাপ হয়ে গেলে সেটির দায়িত্ব কার, তা ঠিক করে কাজ শুরু করতেই অনেক সময় কেটে যায়। সে জন্য সমস্ত পরিষেবা অভিন্ন একটি সংস্থা (কলকাতা পুরসভা)-র হাতে তুলে দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

'ছুটি'র শনিবারে ছুটোছুটি মহাকরণে, অন্য দফতরেও

নিজস্ব সংবাদদাতা

কারণে-অকারণে ছুটির হিসেব মেলাতে ব্যস্ত মহাকরণে শনিবার 'ছুটির দিন'টা কাটল তুমুল ব্যস্ততায়। একই চেহারা ছিল নিউ সেক্রেটারিয়েট, খাদ্য দফতর বা বিকাশ ভবনেও।

শুক্রবার রাতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, ছুটির দিন শনিবার মহাকরণ খোলা থাকবে। সাধারণ কর্মীদের ছুটি থাকলেও এ দিন সকাল থেকে সচিব, অফিসার এবং পুলিশ-নিরাপত্তা রক্ষীদের ব্যস্ততায় কিছুটা হলেও যেন অভ্যাস বদলের ইঙ্গিত।

এ দিন বেলা ১২টা বাজতে ঠিক পাঁচ মিনিটে কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মহাকরণে আসেন। মুখ্যমন্ত্রীর ব্যস্ততা অবশ্য অন্য মন্ত্রীদের মধ্যে দেখা যায়নি। তাঁরা ধীরে সুস্থেই এসেছেন। একে একে হাজির হন শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (বেশি ক্ষণ থাকেননি বিধানসভায় সর্বদল বৈঠকের জন্য), পূর্ত ও পরিবহণমন্ত্রী সুব্রত বক্সী, নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। কিছুটা পরে আসেন উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু, জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র, পর্যটনমন্ত্রী রচপাল সিংহ, ক্রীড়া দফতরের স্বাধীন প্রতিমন্ত্রী মদন মিত্র-সহ অন্যেরা। তার সঙ্গে ঢুকে পড়েন শাসক দলের অনেক উৎসাহী কর্মীও। ফলে বেশ ভিড় হয়ে যায় সংরক্ষিত এলাকায়।

বেলা ২টো নাগাদ সেচ ও ক্ষুদ্র শিল্পমন্ত্রী কংগ্রেসের মানস ভুঁইয়া মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে যান। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বেরিয়ে আসেন। বলেন, সৌজন্য সাক্ষাৎকার। পরে নিজের ঘরে বসে নানা পরিকল্পনার কথা বলেন। তার পরে সল্টলেকে সেচ দফতরে গিয়েও উচ্চপদস্থ কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। দমকল মন্ত্রী জাভেদ খানও এসেই মুখ্যমন্ত্রীর ঘরে হাজিরা দেন। এক মিনিটও কাটল না, বেরিয়ে দ্রুত নিজের দফতরে যান। বিধানসভায় দলের মুখ্যসচেতক, রাসবিহারীর বিধায়ক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় এ দিন মহাকরণে এসে দেখা করেন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে।

নিউ সেক্রেটারিয়েটের ছ'তলায় জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরে এ দিন পৌনে ১টা নাগাদ উপস্থিত হন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। এই বাড়িতে মহাকরণের মতো ভিড় এমনিতেই থাকে না। ফলে তাঁর সময় নষ্ট হয়নি। এসেই সচিব ও ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়ে বৈঠকে বসে যান তিনি। জানতে চান গ্রামাঞ্চলে জল সরবরাহ, আর্সেনিক দূরীকরণ ইত্যাদি প্রকল্পের কাজকর্মের বিবরণ।

ফ্রি স্কুল ষ্ট্রিটে খাদ্য-সরবরাহ দফতরে মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক অবশ্য ঠিক বেলা ১০টাতেই হাজির হয়ে দীর্ঘ বৈঠক করেন সচিব ও উচ্চপদস্থ অফিসারদের সঙ্গে। সাত দিনের মধ্যে খাদ্যশস্য, রেশন কার্ড— সব হিসাব ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে জানানোর নির্দেশ দেন তিনি। বেলা দুটোর পর মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে যান তিনি।

অনেক মন্ত্রীরই দফতর মহাকরণের বাইরে। ফলে 'মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী'র সঙ্গে দেখা করেই উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী ব্রাত্য বসু, স্কুলশিক্ষা মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, কারিগরি শিক্ষা মন্ত্রী রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়, গ্রন্থাগার মন্ত্রী আব্দুল করিম চৌধুরীরা সল্টলেকে বিকাশ ভবনে চলে যান। সেখানে কর্মীদের তরফে তাঁদের ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানানো হয়। পরে মন্ত্রীরা দফতরের সচিব ও অন্য অফিসারদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

এ দিন বিভিন্ন দফতরের মন্ত্রীরা সচিব ও উচ্চপদস্থ অফিসারদের সঙ্গে প্রাথমিক বৈঠক করেন। মঞ্জুর হওয়া প্রকল্প, কাজের গতি, এমনকী আয়-ব্যয়ের ধারণাও কেউ কেউ পাওয়ার চেষ্টা করেন। এর পর স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী ডেকে পাঠান মন্ত্রী, সচিবদের। মন্ত্রীরা তাড়াতাড়ি ছাড়া পেলেও সচিবেরা ছুটি পাননি। স্বাস্থ্য, স্বরাষ্ট্র, শিক্ষা, ভূমি সংস্কার, বিদ্যুৎ, কৃষি ইত্যাদি দফতরের সচিবদের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করে সমস্যা বোঝার চেষ্টা করেন তিনি। পরে তিনি বলেন, "দফতরগুলিতে দীর্ঘ দিন যে কাজ হয়নি বোঝাই যাচ্ছে।"

মমতা শুক্রবারই খবর পেয়েছিলেন, মহাকরণে জলের অভাব। এ নিয়ে এ দিন সংশ্লিষ্ট সচিবের সঙ্গে আলোচনার পর তিনি বলেন, "মহাকরণের জল খেয়ে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, খবর পেয়েছি। সমস্যা মিটে যাবে। দেখছি।" পরে তিনি একতলায় ক্যান্টিন দেখতে যান। সঙ্গে ছিলেন পূর্তসচিব অজিতরঞ্জন বর্ধন। সেখানে বিশাল হলঘর দেখে মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন করেন, "এত বড় হলঘর, শুধুই ক্যান্টিন?" সেখানে মাঝে মধ্যে কর্মী সংগঠনগুলির সভা হয় বলে জানান পূর্তসচিব। জবাব শুনে মুখ্যমন্ত্রী যে সন্তুষ্ট হননি, তাঁর অভিব্যক্তিতে বোঝা যায়। সচিবকে বলেন, "এত বড় ঘরটাকে কী ভাবে কাজে লাগানো যায় দেখুন।"

এ দিন উদাহরণ সৃষ্টিতেও এগিয়ে গিয়েছেন মমতা। এ দিন তিনি দফতরে এসেছিলেন ভিআইপি লিফট চড়ে। কিন্তু দিনের শেষে মহাকরণ ছাড়লেন সাধারণের সিঁড়ি ব্যবহার করে। যাওয়ার আগে জানিয়ে গেলেন, রবিবার ছুটি।

নজরে সিঙ্গুর

কোন পথে ফেরানো হবে জমি, শুরু জল্পনা

নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা

শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন, সিঙ্গুরের 'অনিচ্ছুক' চাষিদের ৪০০ একর জমি 'আইন মেনেই' ফিরিয়ে দেওয়া হবে। শনিবার একই কথা বলেছেন তাঁর মন্ত্রিসভার শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

কিন্তু 'আইন মেনে' কী ভাবে অধিগৃহীত জমি ফেরানো সম্ভব, তা নিয়ে নানা মুনির নানা মত। কেউ বলছেন, টাটা গোষ্ঠী সিঙ্গুরে ন্যানো গাড়ির কারখানা করেনি বলে লিজ-চুক্তি বাতিল করে ওই জমি ফেরত দেওয়া যেতে পারে। কারও মতে, কেন্দ্রীয় জমি অধিগ্রহণ আইন রাজ্য বিধানসভায় সংশোধন করে জমি ফেরত দেওয়া সম্ভব। আবার তৃতীয় একটি মতও উঠে এসেছে, যার নির্যাস হল: জমি টাটা গোষ্ঠীর হাতেই রেখে জমিদাতাদের ভাড়া বাবদ নিয়মিত আয়ের ব্যবস্থা করে দেওয়া হোক। অর্থাৎ, সাপও মরল, অথচ লাঠিও ভাঙল না।

সিঙ্গুরের সেই জমিতে অসমাপ্ত কারখানা।—ফাইল চিত্র

শেষ পর্যন্ত কোন পথে মুখ্যমন্ত্রী জমি ফেরত দেবেন, শনিবার রাত পর্যন্ত তা পরিষ্কার নয়। আপাতত চলছে বিভিন্ন সম্ভাবনা নিয়ে নানা আলোচনা-পর্যালোচনা।

অভিমত ১: সিঙ্গুরে প্রায় হাজার একর জমি নিলেও টাটা মোটরস সেখানে শেষ পর্যন্ত ন্যানো কারখানা করেনি। অতএব তাদের সঙ্গে সরকারের ৯০ বছরের যে 'লিজ-চুুক্তি' রয়েছে, তা বাতিল করে দেওয়া যেতে পারে। চুক্তি বাতিলের পরে 'অনিচ্ছুক' কৃষকদের ৪০০ একর জমি ফিরিয়ে দিয়ে বাকি জমিতে অন্য প্রকল্প হতে পারে। রাজ্যের প্রাক্তন ভূমিসচিব এবং অধুনা জমি সংক্রান্ত বিষয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের 'থিঙ্কট্যাঙ্ক' দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় এ কথা জানিয়েছেন। এ ছাড়াও ১৮৯৮ সালের জেনারেল ক্লজেস আইনের ২১ ধারা সংশোধন করে জমি ফেরত দেওয়া যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি। এ ক্ষেত্রে অবশ্য রাজ্যপালের অনুমতি প্রয়োজন।

এই মতের বিরোধীদের বক্তব্য হল, জমির মালিক এখনও টাটা গোষ্ঠীই। একতরফা ভাবে 'লিজ-চুক্তি' বাতিল করা হলে তারা আদালতে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে গোটা বিষয়টাই বিশ বাঁও জলে চলে যাওয়ার সম্ভাবনা। কারণ, তিন বছরের মধ্যে প্রকল্পের কাজ না-করলে জমি ফেরত নেওয়া সম্ভব, এ কথা বলা হলেও টাটাদের ক্ষেত্রে তা প্রমাণ করা কঠিন। সরকারের একাংশের মতে, সিঙ্গুরে আন্দোলন চলাকালীন টাটার অফিসারেরা শারীরিক ভাবে নিগৃহীত হয়েছেন। বিভিন্ন সময়ে নির্মীয়মান কারখানার জিনিসপত্র চুরি হয়ে গিয়েছে। এ সব নিয়ে থানায় অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে। উপরন্তু, সময়সীমা ধরেই যে কারখানার ৮০%-র বেশি কাজ শেষ হয়েছিল, সেটা প্রমাণ করতেও অসুবিধা হবে না টাটাদের। ফলে সরকারের ব্যর্থতার কারণেই কারখানা করা যায়নি বলে পাল্টা দাবি করতে পারে টাটা গোষ্ঠী।

মামলা-মোকদ্দমার পথে না-হেঁটে জমি ফেরত পাওয়ার উপায় হল, টাটাদের সঙ্গে বোঝাপড়া করে নেওয়া। বামফ্রন্ট সরকারের পক্ষ থেকে যখন জমি ফেরতের প্রসঙ্গ তোলা হয়, তখন টাটারা জানিয়েছিল, ওই জমিতে পরিকাঠামো তৈরি করতে তাদের প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে। জমি ফেরত পেতে হলে সেই 'ক্ষতি' পূরণ করে দিতে হবে। তাদের কথা মানতে গেলে ওই বিপুল অর্থ দিতে হবে সরকারকে। অথবা নতুন সরকারের ঘোষণা মতো বাকি ৬০০ একর জমিতে যারা শিল্প করবে, তাদের ওই আর্থিক দায় বহন করতে হবে। কিন্তু সেটা কতটা সম্ভব, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

অভিমত ২: ১৮৯৪ সালের কেন্দ্রীয় জমি অধিগ্রহণ আইনের ৪৮ নম্বর ধারা সংশোধন করতে পারে রাজ্য বিধানসভা। তবে সেই সংশোধনে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন লাগবে। অনুমোদন পেলেই সংশোধিত আইনে জমিহারাদের জমি ফেরত দেওয়া সম্ভব। এই মতও দেবব্রতবাবুর। তাঁর বক্তব্যের সমর্থনে তামিলনাড়ুর একটা ঘটনারও কথা উল্লেখ করেন তিনি। আইন সংশোধন করে জমি ফেরত দেওয়া সম্ভব বলে মনে করেন রাজ্যের সদ্য-প্রাক্তন ভূমিসংস্কারমন্ত্রী আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা। তাঁর কথায়, "আইন সংশোধন করলে তো সব কিছুই সম্ভব। সংবিধানও তো সংশোধন হয়।" প্রশ্ন ছিল, তা হলে সেই চেষ্টা কেন আপনাদের সরকার করল না? রেজ্জাক মোল্লার জবাব, "কেন করল না সেই জবাব আমি দেব না। তাঁরা (ইঙ্গিত মুখ্যমন্ত্রী ও শিল্পমন্ত্রীর দিকে) দেবেন।"

এই মতের বিরোধীদের বক্তব্য, আগে তো জমি টাটাদের কাছ থেকে সরকারকে ফেরত নিতে হবে, তার পর তো তা 'অনিচ্ছুকদের' ফিরিয়ে দেওয়ার প্রশ্ন। যে জমি সরকারের হাতেই নেই, তা ফেরতের প্রশ্ন আসছে কী ভাবে? জমি হাতে নিতে গেলে সরকারকে প্রথমে আইনি বা ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত জটিলতা সামলাতে হবে।

যাঁর আমলে টাটাদের সঙ্গে সিঙ্গুর চুক্তি, সেই প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেন এ দিন কটাক্ষের সুরে বলেন, "কোন ৪০০ একর, কাদের ৪০০ একর এবং কী ভাবে তা ফেরত দেওয়া হবে, কোথা থেকে জমি আসবে, কী ভাবেই বা আসবে, তা নিশ্চয়ই ওঁরা জানেন! নিশ্চয়ই সব দিক বিবেচনা করেই ওঁরা এ সব বলছেন। আমার জ্ঞান তো সীমাবদ্ধ। ওঁদের মন্ত্রিসভায় অনেক সদস্য আছেন, যাঁরা বিষয়টি বোঝেন। নিশ্চয়ই কিছু একটা ভেবেছেন!"

অভিমত ৩: আইনি বা ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত জটিলতা এড়াতে তৃতীয় পন্থা হিসেবে দু'কুল রাখার সূত্র দেওয়া হচ্ছে। সেই সূত্র বলছে, 'অনিচ্ছুক'-দের জমি টাটারা কারখানার জন্যই ব্যবহার করুক, কিন্তু তার বিনিময়ে তাঁদের এককালীন টাকার পাশাপাশি মাসিক ভাড়া দিক। নিয়মিত ভাড়া পেলে জমির উপরে কৃষকদের সত্ত্ব রয়েছে, এমনটাই মনে হবে। অথচ কারখানা হওয়াও আটকাবে না।

এই মতের প্রবক্তাদের দাবি, বর্তমান পরিস্থিতিতে এটাই সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য সমাধানসূত্র। কারণ, অধিগৃহীত জমিতে কারখানা তৈরির কাজ অনেক দূর এগিয়ে যাওয়ায় তা এখন আর চাষের উপযোগী নেই। জমি ফেরত পেলেও তাকে ফের চাষযোগ্য করে তোলা যাবে কি না সন্দেহ। ফলে জমি টাটাদের ভাড়া দিলে চাষিদের নিয়মিত আয়ের একটা সূত্র তৈরি হবে। সরকারেরও প্রতিশ্রুতি রক্ষা হবে।

মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকেই সিঙ্গুরের 'অনিচ্ছুক' চাষিদের জমি ফেরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে মমতার সরকার এখন কোন পথে হাঁটে সে দিকে নজর রাখছে বামফ্রন্ট। নিরুপমবাবু এ দিন বলেন, "আমরা চাই, সমস্যার সমাধান হোক। টাটারা যদি সত্যিই (অনিচ্ছুকদের) জমি (ফেরত) দিয়ে (সিঙ্গুরে) ফিরে আসেন, তার চেয়ে ভাল কিছু হয় না। এখন তো ওঁরা (তৃণমূল) কেন্দ্রেও আছেন, রাজ্য সরকার ওঁদের, বিধায়ক ওঁদের এবং বিচারালয়েও ওঁদের লোক আছে। কাজটা করতে পারলে রাজ্যের জন্য ভালই হবে। আমাদের এখন দেখার এবং অপেক্ষার সময় যে, ওঁরা কী ভাবে প্রকল্পটি রূপায়িত করেন!"



No comments: